Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ভ্যাপসা গরমে নাকাল শিশুস্বাস্থ্য

মাহমুদুল হাসান

জুলাই ২০, ২০২২, ০১:৩১ এএম


ভ্যাপসা গরমে নাকাল শিশুস্বাস্থ্য

আসমা ইসলামের ছোট্ট সংসার রাজধানীর ভাটারা এলাকায়। গেলো এক মাসে দুই বার ঘুরেছেন হাসপাতালের বারান্দায়। প্রকৌশলী স্বামী আর গৃহিণী আসমার চেহারায় ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ। ছয় মাসের একমাত্র ছেলে আনানকে নিয়ে এসেছেন শ্যামলী বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিউিটে। 

গেলো দুই দিন হলো বাচ্চার ডায়ারিয়া। শুরুতে ভাটারার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু কলিজা ছেড়া সন্তানের উন্নতি না হওয়ায় গতকাল সকালে এসেছেন বাংলাশে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। 

রোগীর দীর্ঘ ভিড় ঠেলে বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যখন ফিরছিলেন তখন বলেন, দুদিন হলো বাচ্চাটা অসুস্থ। সন্তানের অসুস্থতায় মায়ের কলিজা ছিড়ে যায়। অসুস্থতা যেন আমার ঘর ছাড়ছে না। 

আক্ষেপ করে জানান, অল্প কিছু দিন আগে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়েও শিশু হাসপাতালে এসেছিলেন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত লামিয়া এখন সুস্থ হলেও এবার আনান অসুস্থ। আসমা ইসলামের মতো বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে এসেছেন রুবিনা জামান। সামিরা নামের ছয় বছরের মেয়ের প্রচণ্ড জ্বর। 

গত তিন দিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাই রুবিনা আর ভরসা রাখতে পারেনি বগুড়ার সেই স্থানীয় হাসপাতালে। ছুটে এসেছেন ঢাকার শিশু হাসপাতালে। শুধু আসমা-রুবিনা নয়, শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে সকাল থেকেই জটলা বেঁধে থাকে রোগী ও তার স্বজনদের। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। 

শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত অসুস্থতা এই একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে দিচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। শুধু জটিল রোগী হলে তাদের শয্যা খালির ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। প্রচণ্ড দারদাহে রাজধানীসহ সারা দেশে নাকাল শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। অতিরিক্ত তাপে শিশু মৌসুমি জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। 
সামান্য ঠাণ্ডা থেকে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে ডেঙ্গু-করোনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় শিশুদের নিয়ে পরিবারও রয়েছে শঙ্কায়। পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া, প্রচণ্ড তাপে নষ্ট হওয়া খাবারের প্রভাবে ডায়রিয়া, জন্ডিস ও নিউমোনিয়ার রোগীও কম নয়। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার মৌসুমি জ্বর ঠাণ্ডা বিলম্বে এসেছে। শ্রাবণের এই দিনে যখন ঝুম বৃষ্টি থাকার কথা সেখানে এখন দাবদাহ চলছে। 

এমন কাঠফাটা রৌদ্র আর ভ্যাপসা গরমে প্রাপ্তবয়স্করা খাপ খাওয়াতে পারলেও শিশুরা খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে গরম থেকে শিশুরা জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগবালাই থেকে শিশুদের সুরক্ষায় পরিবারকে আরও যত্মবান হতে হবে। কোনোভাবেই শিশুকে নিয়ে রোদে ঘোরাফেরা করা যাবে না। 

সবসময় সহনীয় তাপমাত্রায় রাখতে হবে। বেশি বেশি তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠাণ্ডা খাবার খাওয়ানো যাবে না। শিশুরা অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে মুখস্থ কোনো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের এপিডোমিলজি অ্যান্ড রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের গত ১৬ জুলাইয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে ১৬ জন শিশু ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। বহির্বিভাগে আরও ১৪ জন ডায়ারিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। 

হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে আগের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি রোগী ভিড় করছে। 

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান (কামরুল) বলেন, ‘সম্প্রতি শিশুর রোগ বালাই বেড়ে গেছে। 

অতিরিক্ত তাপমাত্রার সাথে বাচ্চারা খাপ খাওয়াতে পারে না। এতে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি এমনকি নিউমোনিয়া পর্যন্ত হচ্ছে। পানিবাহিত রোগেরও দাপট বেড়েছে। ডায়ারিয়া, কলেরা, জন্ডিস রোগীও বাড়ছে। সেই সাথে আমরা লক্ষ্য করছি ডেঙ্গু-করোনা ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে। 

প্রতিদিন শুধু শিশু হাসপাতাল নয়, প্রতিটি হাসপাতালে শিশু রোগীর ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজারেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। আমাদের হাসপাতালে গড়ে ২০ শতাংশেরও বেশি রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে ভিড় করা রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশিতে আক্রান্ত। আমরা সবাইকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। শুধু জটিল রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। 

এই তাপদাহে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গরমে কোনোভাবে পচা, বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত গরমে জ্বর, ঠাণ্ডা লাগলে নরমাল প্যারাসিটামাল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। শিশুদের নাক. মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। 

সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে শিশুদের দূরে ছায়ায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে মানুষের ভিড় ঠেলে শপিংমলে যাতায়াত, এক জায়গা থেকে অন্যত্র জার্নি করা যাবে না। এতে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

Link copied!