বরগুনা প্রতিনিধি
আগস্ট ২, ২০২২, ০২:১৭ এএম
বরগুনা প্রতিনিধি
আগস্ট ২, ২০২২, ০২:১৭ এএম
ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ইলিশ শিকারে গেছেন জেলেরা। প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালো পরিমাণে পাওয়া গেলেও হঠাৎ করে এখন সাগরে দেখা মিলছে না ইলিশের। এতে হতাশ হয়ে ফিরছেন বরগুনার জেলেরা।
তাদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতে একই সময় নিষেধাজ্ঞা পালিত না হলে ইলিশ ছাড়া খালি হাতে ফিরতে হবে বলে মনে করেন জেলেরা। টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় গত ২৩ জুলাই মধ্যরাতে।
ওই দিন থেকেই বঙ্গোপসাগরে যাত্রা শুরু করেন পাথরঘাটার জেলেরা। প্রথম কয়েক দিন কিছু জেলের জালে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। এক নৌকায় ১০০ মণ ইলিশ নিয়ে ফেরার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এখন সাগরে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা।
কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশায় পড়েছে পাথরঘাটার ২২ হাজার জেলে পরিবার। বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা মেরামত ও জাল কিনেছেন জেলেরা। এখন ঋণের টাকা শোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
দেশের বৃহত্তম পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে মাছ শিকার শেষে ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। তবে মাছ ধরা পড়ছে খুবই অল্প। নিষেধাজ্ঞার কারণে এ অবতরণ কেন্দ্রটি এত দিন হাঁকডাক ছাড়াই নিস্তব্ধ পড়ে ছিল। আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় এখনো প্রাণ ফেরেনি এ কেন্দ্রে। এতে বেকার বসে আছেন ঘাটসংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।
বন্দরে অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরাও। দুই-এক ঝুড়ি ইলিশ ঘাটে আনা হলেও নেই কোনো হাঁকডাক। কারণ, এ সময় যে পরিমাণ মাছ অবতরণ কেন্দ্রে আসার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ নেই ঘাটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ইলিশের খোঁজ না মিললেও সাগর মোহনা ও পূর্ব দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে কিছু ইলিশের দেখা মিলছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলেরা সেদিক থেকে মাছ শিকার করলেও ডাকাতির কবলে পড়ে সব খোয়াচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত পাথরঘাটার জেলেরা।
রফেজ, সোবহান, আলম মীরসহ কয়েকজন জেলে বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকার করতে সাগরে গিয়েছি আমরা। তবে ভরা মৌসুমে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও এখন নদী ও সাগরে ইলিশের দেখা মিলছে না। সারা দিন ট্রলার নিয়ে খাটাখাটনির পরও খরচের টাকা উঠছে না। ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।
শাজাহান, মৃনাল, একাব্বরসহ আরও কয়েকজন জেলে বলেন, আমরা অনেকেই এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাগরে গিয়েছি। ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করব। কিন্তু ইলিশ না পাওয়ায় সংসারও চলে না, ঋণও শোধ করতে পারছি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে আমাদের।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর জমাদ্দার বলেন, নদীতে ইলিশ না থাকায় জেলেরা যেমন অভাবে রয়েছেন, তেমনি আমরাও হতাশায় রয়েছি। জেলেদের কাছে দাদনের অনেক টাকা পড়ে আছে আমাদের। নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেরা নতুন করে আরও টাকা ধার নেয়ার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছেন; কিন্তু দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মাছ না থাকায় কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ও সমুদ্রে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। এখনো ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতে একই সময়ে অবরোধ না দিলে আমাদের জেলেরা ইলিশে মার খেতেই থাকবে। দেশি জেলেদের রক্ষা করতে এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর এ সময়টায় বাজারে প্রচুর ইলিশ আসার কথা। জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ধরা না পড়ায় বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত অবতরণ কেন্দ্রে ১১ হাজার ৩৭২ কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে, যা তুলনামূলক অনেক কম।
পাথরঘাটা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর তিন-চার দিন ইলিশ ধরা পড়লেও হঠাৎ ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। কেন ইলিশ ধরা পড়ছে না, তা বলা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে পারে। আগস্টের মাঝামাঝি নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।