Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

পাঁচ নারী পাচ্ছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ৭, ২০২২, ০৩:৪২ এএম


পাঁচ নারী পাচ্ছেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং পঁচাত্তেরর ১৫ আগস্টের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।

প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য সহধর্মিণী  ও সহযোদ্ধা। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা ও প্রেরণা দিয়েছেন।

এই মহীয়সী নারী নিজেকে শুধু স্বামী, সন্তান, সংসার ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে সর্বক্ষণের সহযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ী হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন।

মহান স্বাধীনতা অর্জনে এ মহীয়সী নারীর রয়েছে গৌরাবজ্জ্বল ভূমিকা। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে রেখে গেছেন অনন্য ভূমিকা।

তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের কর্মসংস্থানসহ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। তিনি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, দেশপ্রেম, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহসকিতা, ত্যাগ ও অনুপ্রেরণার উৎস বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্ম দিবসকে সরকার ৮ আগস্ট ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে প্রতি বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক দেয়া হবে।

এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের  স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ দেয়া হবে।

এ বছর সরকার, ‘রাজনীতি’ ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতি ক্ষেত্রে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) কে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদকে ভূষিত করেছে। 

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা গতকাল শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সম্মেলন কক্ষে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক’ প্রদানের বিস্তারিত গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী এ সময় সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ আগস্ট সকাল ১০টায় গণভবন থেকে অনলাইনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং অনলাইনে আরো সংযুক্ত থাকবে জেলা প্রশাসক গোপালগঞ্জ।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব নিজ জীবনের কঠিন দুঃসময়েও অসহায় মানুষের আর্থিক সহায়তা করেছেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন। বঙ্গমাতার এই মহানুভবতাকে স্মরণ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গমাতার জন্মদিনে অসচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছে।

এবারও সাম্প্রতিক বন্যাকবলিত পাঁচটি  জেলাসহ সারা দেশে অসচ্ছল ও  অসহায় নারীদের প্রায় পাঁচ হাজার সেলাই মেশিন এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিনে একই সময়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

এ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার ওপর তার রচিত ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা আমার মা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য কর্মজীবী মহিলা হোস্টল বিভিন্ন মহীয়সী নারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে।

ঢাকার মিরপুরে নওয়াব ফয়জুন্নেছা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল এবং খিলগাঁও বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সংকটে, সংগ্রামে ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী পুনর্বাসন কার্যক্রমে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এ বিবেচনায় বিদ্যমান নীলক্ষেতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলটি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ এর নামে নামকরণ করা হয়েছে।

ঢাকায় কর্মজীবী নারীর আবাসনের ব্যাপক চাহিদা থাকায়  ঢাকায় ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হোস্টেল কমপ্লেক্সে একটি নতুন ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত ভবনে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট, জিম, বিউটি পার্লার, ইনডোর গেম, সিসি ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক এক্সেস কন্ট্রোল ডিভাইস, এলইডি মনিটর, সুপরিশর তিনটি লিফট, জরুরি বহির্গমনসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নবনির্মিত ১০ তলা ভবন নির্মাণের ফলে আরো ২৫৪ জন কর্মজীবী নারীকে আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। এ কমপ্লেক্সে ৫০৩টি আসন বিশিষ্ট আরো দুটি ভবন রয়েছে। এখন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের মোট আসন সংখ্যা হবে ৭৪৮টি। যার ফলে আরো বেশি সংখ্যক কর্মজীবী নারীর নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার জন্মদিন ৮ আগস্ট ২০২২ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, নীলক্ষেত, ঢাকা-এর নবনির্মিত ১০ তলা সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন করবেন। যা দেশের কর্মজীবী নারীদের জন্য বড় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

সংবাদ সম্মেলন প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মহীয়সী বঙ্গমাতার চেতনা, অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা’। অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবনভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম, মহিলা-বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাকিউন নাহার বেগমসহ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের সাথে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহ বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। যার মাধ্যমে দেশের নতুন প্রজন্ম বঙ্গমাতার সংগ্রামী জীবন, আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অপরিসীম অবদান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা  তথ্য জানতে পারবে।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে ক্রোড়পত্র ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার গৌরবময় কর্মজীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। বঙ্গমাতার কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
 

Link copied!