আগস্ট ৯, ২০২২, ০১:২৬ এএম
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে।
বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ও সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন রা. এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
ওই ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সমপ্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ বিভাগ। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তার বাণীতে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন রা.সহ কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণকারী সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পবিত্র আশুরা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকের দিন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহরম হজরত ইমাম হোসেন রা., তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচররা বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সেনাদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বতবাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার। পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা আমাদের সবার জীবনে প্রতিফলিত হোক।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তি ও সমপ্রীতির ধর্ম। কোনো ধর্মই হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ বা বিভেদ সমর্থন করে না।’ পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘পবিত্র আশুরা অত্যন্ত শোকাবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি দিন। বিভিন্ন কারণে এ দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, হিজরি ৬১ সালের ১০ মহরম মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন রা. ও তার পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহদতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমাদের সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা জনগণকে সব সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। এ সময় সবাই অসীম ধৈর্য নিয়ে সহনশীল ও সহানুভূতিশীল মনে একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে। পাশাপাশি তিনি এই মহামারিতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালন করার অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেন ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে পবিত্র আশুরার আনন্দ উপভোগ করি এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষ দোয়া করি যেন এই সংক্রমণ থেকে সবাই দ্রুত মুক্তি পাই। দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করছে।