Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

ইভিএম আস্থায় বিতর্ক

আবদুর রহিম

আগস্ট ২৫, ২০২২, ০২:১৩ এএম


ইভিএম আস্থায় বিতর্ক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।  ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আস্থা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ইসির আহ্বানে রাজনৈতিক সংলাপে  জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলেছে। আওয়ামী লীগসহ চারটি দল মাত্র ইভিএম চেয়েছে।

অন্যদিকে, বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করে। এ পরিস্থিতে ইসির সিদ্ধান্তকে দেশের মানুষের বড় অংশই গ্রহণ করছে না। দেশের সচেতন মহল মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে ইসি।

এর আগে কয়েকটি নির্বাচনে শিক্ষিত ও শহরের মানুষের মধ্যে অ্যাপ্লাই করেও কার্যত ফলাফল পাওয়া যায়নি। স্বয়ং দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিকরাও ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

এখন জাতীয় নির্বাচনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেখানে নারী, অল্প শিক্ষিত মানুষ ও বয়স্করা ভোট দিতে গিয়ে  বড় ঝামেলার মধ্যে পড়বেন।

অন্যদিকে সরকারবিরোধী লোকজনের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারকে খুশি করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও ইসির ভাষ্য— কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি, নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।  

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে ইসিকে নতুন করে আরও ইভিএম কিনতে হবে। এখন সর্বোচ্চ ৭০ আসনে ভোট নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ ঘোষণা আশে ১৫০ আসনের নির্বাচনের।

ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে মোট ৭৯১টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচনও ভোট হয়েছে ইভিএমে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারে যেসব নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো মূলত শহর এলাকা ছিল। ওইসব অঞ্চলেও ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। নারী ও বয়স্কদের বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আর প্রতিটি ভোটেই সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া সবাই জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন।

এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কাছে যে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটি কেনা হয়েছিল প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা করে। সে ক্ষেত্রে একই দামে আরো দেড় লাখ ইভিএম কিনতে হলে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা। এমন দৃশ্যপটে রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে। ইসি নিজেদের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন দেশের নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম দেয়ার ঘোষণায় নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ তা আবারো প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার কেন বিদেশিদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছে সেটি মঙ্গলবার আবারো প্রমাণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমেই আমরা বলেছি, এই সরকার যেখানে যাকে নিয়োগ করবে তাদের পরিচয় যাই হোক, তাদের অন্তর ছাত্রলীগ-যুবলীগ। যুবলীগ-ছাত্রলীগের অন্তর থাকার কারণে গণভবন থেকে যে নির্দেশনা আসবে তার বাইরে তারা যাবে না। আমরা বলেছি, এই নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ। সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা এই নির্বাচন কমিশনের নেই। সেটি নির্বাচন কমিশন নিজেই আবার প্রমাণ করল।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইসি যে সংলাপ করেছিল সেখানে অধিকাংশ দল ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলে।’ কিন্তু ইসি জানায়, ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তাহলে কিসের জন্য এই সংলাপ প্রশ্ন রিজভীর।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে দেশের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কোনো মতামতই আমলে নেয়নি।

ইসি সবাইকে ডেকে অপমান করেছে। আমাদের ইভিএম ত্রুটিযুক্ত এটি  আগের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘পুরোনো বিতর্কিতদের অনুসরণ করছে আউয়াল কমিশন।

২০১৪ ও ১৯-এর মতো একটি ব্যর্থ নির্বাচনের পথে হাঁটছে এই ইসিও। যেখানে দেশের মানুষ, অভিজ্ঞ মহল সবাই এর বিরোধিতা করছে সেখানে কোন যুক্তিতে ব্যবহার করবে ইভিএম সেটি আমার কাছে বোধগম্য নয়। ইভিএম নিয়ে বহু রকম সমস্যা ও বিতর্ক আছে। আস্থার সঙ্কট আছে। কারচুপির অভিযোগ আছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা ঠিক হবে না।’

দেশের মানুষ ও বিতর্কিত ইস্যুর মধ্যে গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের চাওয়াকে গুরুত্ব দিতে নয়, সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

নির্বাচনে ইভিএম নতুন সংকট প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য মুখ্য ছিল না বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল।’

তিনি বলেন, ‘যারা ভোট দিতে আসবেন, সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কে কি বলেছে সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় আসেনি। কিন্তু বক্তব্যগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। একই সাথে লাখ লাখ কোটি কোটি ভোটার, যারা ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রে আসেন, তারা যেন আরও ভালোভাবে ভোট দিতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ভবিষ্যতটা আমরা বলতে পারব না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আগের নির্বাচনগুলো নিয়েও আপনারা সংকটের কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কি-না তা প্রেডিক্ট করার সাধ্য নেই।’
 

Link copied!