আগস্ট ২৫, ২০২২, ০২:২২ এএম
যানজট নিরসন ও চলাচল সহজে ব্যবহার হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভার। এটি ব্যবহারে রয়েছে নানা নির্দেশনা। তবে চালকদের অনেকেই তা মানছেন না। উড়াল সড়কে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে চলছে সব ধরনের ভারী যান।
মালবাহী ভারী যানগুলো রাতে চলাচল করে বেশি। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উড়াল সেতুতে রয়েছে নানা সমস্যা। নগরের কোনো কোনো ফ্লাইওভারে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। ফলে এতে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি ও ময়লা-আবর্জনা।
আবার কোথাও কোথাও জ্বলছে না সড়কবাতি। এসব বিষয়ে কোনো নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। একে অপরকে দোষ চাপিয়েই দায় সারছে তারা। পরিস্থিতির উত্তরণে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে পণ্যসহ গাড়ি পরিমাপের জন্য এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করা এবং কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সরেজমিন দেখা যায়, মগবাজার এবং বনানী ফ্লাইওভারে অবাধে চলছে ওভারলোডেড ভারী যানবাহন। এ সড়ক দিয়ে চিনামাটি ও পাথর বোঝাই যানবাহন চলাচল করছে নিয়মিত।
রাজধানীর অন্যান্য ফ্লাইওভারেও ভারী যানবাহন চলাচল করছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সিমেন্ট-রডবাহী যানসহ সব ধরনের যান চলাচল করছে। অতিরিক্ত ওজনে উড়াল সড়কে উঠতে-নামতে লাগছে অনেক সময়। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ফ্লাইওভারগুলোর অনেক স্থানে খানা-খন্দের কারণে বৃষ্টির পানি জমে থাকছে। এ পানি সরতে দু-একদিন সময় লাগছে।
এমনকি গাড়ি চলার সময় বৃষ্টির পানি অন্য গাড়ির ওপর গিয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ফ্লাইওভারে সৃষ্টি হওয়া খানা-খন্দে জমে থাকছে ময়লা-আবর্জনা। কোনো কোনো ফ্লাইওভারের বেশ কয়েকটি ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে না। এছাড়া দিনের বেলায় যাত্রীবাহী বাসগুলো নিয়মিত ওভারটেকিং করছে। বাসগুলোর ওভারটেকিংয়ের ফলে যাত্রীরা থাকে আতঙ্কগ্রস্ত।
যাত্রীরা জানান, উড়াল সড়কে বাস, প্রাইভেটকার-পিকআপগুলো প্রায় সময়ই ওভারটেকিং করে। এতে আমাদের ভয় হয় কখন জানি দুর্ঘটনা ঘটে।সরেজমিন আরও দেখা যায়, ফ্লাইওভারের তেজগাঁও অংশ থেকে হলিফ্যামিলি ও মগবাজার ওয়্যারলেসের দিকে ওঠার আগে ফ্লাইওভারের ডিভাইডার ভেঙে গেছে। ফলে যানবাহন উঠতে ব্যাগ পেতে হচ্ছে। কখনো কখনো ফ্লাইওভারে উঠার জন্য পরিবহন আটকে রাখতে হয়।
উদ্বোধনের পর থেকেই ফ্লাইওভারের সড়ক বাতি নিয়েও ছিল জটিলতা। অন্ধকার থাকায় সে সময় মাদকগ্রহণসহ নানা রকম অপরাধ কর্ম চলত অবাধে। পরে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হলে সেসব অপরাধ কমে আসে। কিন্তু কয়েক মাস পর থেকে ল্যাম্পপোস্টগুলো নষ্ট হওয়া শুরু করে। ধীরে ধীরে সেখানে অন্ধকারের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এমন পরিবেশে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রাইভেটকার চালক রাশেদুল ইসলাম রানা প্রতিবেদককে বলেন, বৃষ্টি হলেই মগবাজার ফ্লাইওভারে পানি জমে থাকে। ফলে অন্য যানবাহন চলাচলের সময় পানি অন্য গাড়ির ওপর পড়ে। গর্তের কারণে তো কিছুটা সমস্যা হয়। আজমেরি, ভিক্টরসহ কয়েকটি বাসের চালকরা জানান, ফ্লাইওভারে অনেক স্থানে খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে। সেখানে পানি ও ময়লা জমে আছে। বাস চালাতে গিয়ে আমাদের তো একটু সমস্যা হয়।
ওভারটেকিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে তারা বলেন, সবসময় করি না। পেছনের গাড়ি আগে যেতে চাইলে তখন করি। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালাই আমরা। আমার আগে অন্য বাস চলে না গেলে তো ওভারটেক করতে হয় না।
রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোতে যাতায়াত করা যাত্রীরা বলেন, বাসচালকরা সবসময় ফ্লাইওভারে ওভারটেকিং করে। আমাদের ভয় হয়, চালককে বললেও কথা শুনে না। বাধ্য হয়েই এসব বাসে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। শুধু ফ্লাইওভার নয়, পুরো রাস্তায় বাসগুলো প্রতিযোগিতা করে বাস চালায় চালকরা। ওভারটেকিং করতে গিয়ে অনেকসময় গ্লাস ভেঙে শরীরে বা মুখে পড়ে।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আমার সংবাদকে বলেন, উড়াল সড়কে ভারী যান চলাচলে তো অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও চলছে। ধরুন ফ্লাইওভারে একটি ভারী যান উঠলে সমস্যা হবে বিষয়টা তেমন নয়। কিন্তু নিয়মিত ও বেশি সংখ্যক ভারী যান চলাচল করে তাতে সমস্যা হবে।
যেমন- যে স্থাপনাটির স্থায়িত্ব ৫০ বছর আছে, তখন এর স্থায়িত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। কোনো ভূমিকম্প হলে তখন ভয়ের আশঙ্কা থাকবে। আমরা চাই না এমন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটুক। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনো ভারী যান চলাচল যেন করতে না পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহাম্মেদ আমার সংবাদকে বলেন, ফ্লাইওভার দিয়ে কোনো ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। একটি ভারী যানবাহন ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করছে এমন ছবি দেখালে তিনি বলেন, এমন ১০০ ভারী যানবাহন চলাচল করলেও ফ্লাইওভারের কিছু হবে না।
তাছাড়া ফ্লাইওভারে ভারী যান চলাচল যেন না করতে পারে সে বিষয়ে ডিএমপি দেখবে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ভারী পণ্যবাহী যান চলতে পারবে না, এমন কোনো বাধা নেই। ফ্লাইওভার উদ্বোধন হয়েছে প্রায় ছয় বছর। এতো বছর পার হয়েছে কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। যানবাহন চলাচল করলে গর্ত তৈরি হবেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জেনা. মুহ. আমিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন আমার সংবাদকে বলেন, যেসব স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকছে ও খানা-খন্দ হয়েছে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। লাইটিংয়ের সমস্যাও সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবর রহমানকে ফোন দিলে তিনি জানান, আমি ট্রেনিংয়ে আছি তাই আপাতত কথা বলতে পারছি না। আপনার সাথে পরে কথা বলব।