আগস্ট ২৬, ২০২২, ১২:৩২ এএম
ভোট চলাকালে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ চান না বলেও জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কয়েকটা রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব ছিল যেন নির্বাচনকালীন সময়ে ওই মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। আমরা সেটার সাথে একমত হইনি।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ জন্য সরকারে কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন একজন কমিশনার। তবে সেনাদের কোনো বিচারক ক্ষমতা দিতে চায় না কমিশন। স্ট্যান্ডিং ফোর্স বা টহল বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে টেকনিক্যাল সহাকারী হিসেবে তারা থাকবে।
তিনি এও বলেন, ভোটের সময় চারটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কমিশন চায় বলে যে সংবাদ প্রচার হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। তারা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে যা যা সহায়তা প্রয়োজন তাই চান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী সাধারণ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেবো, সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। সরকারকে প্রস্তাব দেবো সেনাবাহিনীর সহায়তা দেয়ার জন্য।’ সরকার সেনাবাহিনী দেবে কি-না, এমন প্রশ্নে আলমগীর ফৌজদারি কার্যবিধি বা সিআরপিসি ও নির্বাচন কমিশনের আইনের প্রসঙ্গ টেনে আলমগীর বলেন, ‘সরকারে যেকোনো সংস্থার আমরা সহযোগিতা চাইতে পারি। কাজেই সেনাবাহিনীর যদি সহায়তা চাই, তারা সেই সহায়তা দিতে বাধ্য।’
সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে : ভোটে সেনা মোতায়েন বিএনপি ও সমমনাদের একটি জোরাল দাবি। তারা আরও চায়, সেনাবাহিনীর যেন বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়। তবে বিচারিক ক্ষমতা থাকছে না— সেই স্পষ্ট করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের সময় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্যকারী হিসেবে থাকেন। টহল দিতে থাকেন। যেখানে যখন ডাক পড়ে সেখানে যান। নির্দিষ্ট কেন্দ্রে থেকে থেকে পুলিশ আনসার যেভাবে করেন সেভাবে তো করা সম্ভব না। স্ট্যান্ডিং ফোর্স হিসেবে থাকেন’-বলে যোগ করেন তিনি। অন্য এক প্রশ্নে আলমগর বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার বাইরে তাদের দেখার সুযোগ নেই। ইভিএমে যেখানে ভোট হয় সেখানে তাদের কিছু এক্সপার্ট লোক আছে। কোনো সমস্যা হলে সেটা দেখার জন্য তারা থাকবেন, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নয়। তারা থাকবেন টেকনিক্যাল সহকারী হিসেবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।’
‘চার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ চাই না’ : ভোট চলাকালে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ চান না বলেও জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কয়েকটা রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব ছিল যেন নির্বাচনকালীন সময়ে ওই মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যাস্ত করা হয়। আমরা সেটার সাথে একমত হইনি।’ মন্ত্রণালয়ের কাজের ধরন ভিন্ন উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, ‘তদের ডে টু ডে জনগণের সেবা দিতে হয়। তাদের কাজের নেচার একরকম। আমদের কাজের নেচার এক রকম। সরলভাবে যেভাবে ব্যাখা দেয়া হয়েছে বাস্তব করা এটি সম্ভব না।’ তবে কমিশনকে চাহিদা অনুযায়ী এসব মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন কমিশন সাহায্য চাইলে তারা সাহায্য করতে বাধ্য। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের আলোকে নির্বাচন সংক্রান্ত সময়ে যে সমস্ত বিষয়ে তাদের সহযোগিতা নেয়া দরকার, সে বিষয়ে অবশ্যই তাদেরকে বাধ্য করা হবে। সেটিই আমরা বলেছি।’ বাধ্য করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে সে ক্ষমতা দেয়া আছে তারা এটি করতে বাধ্য। আইনগুলোতে বলা আছে। আমাদের নির্দেশ যদি না মানেন, সেখানে শাস্তি উল্লেখ করা আছে।’
ইভিএমে ভোট ৫০ আসনেও হতে পারে : নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত হলেও কতগুলো আসনে এই মেশিন ব্যবহার হবে— সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মো. আলমহীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আছে ৭০ থেকে ৮০টি। পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে আমরা ১৫০ আসনেই করতে পারব, তাহলে ১৫০ আসনেই করব। যদি আমাদের প্রকিউরমেন্ট করা সম্ভব না হয় (নতুন মেশিন কেনা না গেলে) তাহলে ৭০-৮০ আসনেই হতে পারে। যদি মেশিন যদি আরও নষ্ট হয়ে যায় তাহলে ৫০টিতে হতে পারে।’ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে আরও দেড় থেকে দুই লাখ ইভিএম কিনতে হবে বলে জানান এই কমিশনার। এই কেনার কাজ শুরু হয়ে গেছে কি-না এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। সরকারের সাথে নির্বাচন কমিশন আঁতাত করেছে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারের সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’
ভোট কবে : দ্বাদশ ভোট কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে করতে হবে। মেয়াদ শেষ হবে ৩০ তারিখের (২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি) মধ্যে। সুতরাং এর আগে ৩০ দিনের মধ্যে করলেই হবে।’
বিএনপি যদি ভোটে না আসে : এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো দল আসলেও নির্বাচন হবে, না আসলেও হবে। ‘৩৯টি রাজনৈতিক দল আছে। কোনো দল যদি না আসে নির্বাচন যে বন্ধ রাখতে হবে এমন কথা তো কোথাও বলা নেই। আইন অনুযায়ী, নির্বাচন করাটাই বাধ্যকতামূলক। না হলে আমরাই সংবিধানবিরোধী কাজ করব, সংবিধান ভঙ্গের দায়ে দায়ী হব।’ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ মাসের শেষে অথবা সামনের মাসের শুরুতে রোডম্যাপের বিষয় চূড়ান্ত হবে। রোডম্যাপে থাকবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে গেলে কী কী কাজ করা প্রয়োজন, সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করব, কী চ্যালেঞ্জ থাকবে, কীভাবে মোকাবিলা করব।’