Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান

মুছা মল্লিক

সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ০১:০১ এএম


জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান

বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, দক্ষ শিক্ষক, এমনকি মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের জন্য নেই চাহিদামাফিক জনবলও। তবুও চলছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ গবেষণা করা হলেও নেই কাঙ্ক্ষিত গবেষণাগার। এত নেই-এর ভিড়ে বছর বছর শিক্ষার্থী ভর্তির পাশাপাশি সেখানে সনদও পাচ্ছেন তারা।

এ যেন কিন্ডারগার্টেনের আদলে সনদনির্ভর এক বিশ্ববিদ্যালয়! এখানে ভর্তি হলেই বছর শেষ হয়; আর বছর শেষ হলেই মেলে গ্র্যাজুয়েশনের সনদ। এমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘কিন্ডারগার্টেন’-এর আদলেই চলছে রাজধানীর মোমেনবাগের দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য মঞ্জুরি কমিশন দ্বারা নির্ধারিতসংখ্যক পূর্ণকালীন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, মাত্র ১৭ জন শিক্ষক নিয়েই চলছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম।

এই ১৭ শিক্ষকের তিনজন অধ্যাপক, দুজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক এবং মাত্র ১০ জন প্রভাষক পদমর্যাদার। প্রভাষকদের অনেকের আবার দক্ষতা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মাত্র ১৭ শিক্ষকের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কলা এবং আইন অনুষদের অধীনে পাঁচটি বিভাগ ও ১১টি প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি প্রোগ্রামে দুজন করে শিক্ষক থাকলেও সেখানে অন্তত ২২ জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এতগুলো প্রোগ্রাম চললেও শিক্ষক সংকটে ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

শিক্ষক সংকট ও গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলেও ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণা খাতে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা গবেষণা ব্যয় দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করলেও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারা এবং পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না পেয়ে জোড়াতালিতেই চলছে। এমন বেহাল দশায় একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংকট বাড়ছে, অপরদিকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে উচ্চশিক্ষা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ-সংক্রান্ত তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়। ওই তথ্যবিবরণীতে দেখা যায়, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, এমনকি কোষাধ্যক্ষও নেই।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, দক্ষ শিক্ষক, প্রযুক্তিগত সুবিধা, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নিশ্চিত করতে না পারলে কখনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা উচ্চশিক্ষাকে  হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামীতে একটি সনদনির্ভর প্রজন্ম গড়ে উঠবে। যারা কাগজে-কলমে শিক্ষিত হলেও বাস্তবে জ্ঞানশূন্য থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে অথচ সেখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, এমনকি ডিন থাকবেন না— এমন হতে পারে না। এমন পরিস্থিতে বরং কিন্ডারগার্টেনই চলতে পারে।

চলমান সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার আমার সংবাদকে বলেন, আমরা যখন নিয়মমাফিক মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে কাগজ জমা দিই, তখন তাদের দায়িত্ব থাকে সেই জিনিসগুলো ফলোআপ করা। কিন্তু দিনের পর দিন ফাইল পড়ে থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। একদিকে ফাইল ঝুলিয়ে রেখে, অন্যদিকে বলবে আইন অমান্য করেছি— এমনটা হতে পারে না। আমাদের ইউনিভার্সিটি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়।

অন্য দশটি ইউনিভার্সিটির সাথে আমাদের ইউনিভার্সিটিকে মেলালে হবে না। আমার কাজ অনুযায়ী আমি ফাইল জমা দিয়েছি; তারা তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। এত নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ না করে আমাদের যে শিক্ষার্থীরা ভালো করছে, তাদের কথা লিখুন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম আমার সংবাদকে বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন মানছে না, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের কাছে কোনো ফাইল এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। এখানে ভোগান্তির শঙ্কা নেই। নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববি

দ্যালয় থেকে তিনজন যোগ্য শিক্ষাবিদের নাম প্রস্তাব করার কথা রয়েছে; কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা উপাচার্য নিয়োগের প্রস্তাব পাঠালেও সেখানে যোগ্য প্রার্থী থাকেন না। সুতরাং যোগ্য প্যানেলের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আবেদন করতে বলে। এভাবেই দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়।

এ বিষয়টি সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য (ট্রাস্টি বোর্ড মনোনীত) অবিনয় চন্দ সাহা আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের উপাচার্য প্যানেল প্রক্রিয়াধীন। তবে উপ-উপাচার্য নিয়োগের আবেদন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট ও বিদ্যমান অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু সংকট থাকলেও চেষ্টা করছি সেগুলো নিয়ে কাজ করার।

Link copied!