Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

যমুনার বিল-ঝিলে শাপলা ফুটলেই হাসি ফোটে ওদের

রোকনুজ্জামান, চৌহালী

রোকনুজ্জামান, চৌহালী

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ০১:২২ এএম


যমুনার বিল-ঝিলে শাপলা ফুটলেই হাসি ফোটে ওদের

যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালীর   বিভিন্ন বিল ও ঝিলে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে  বিস্তীর্ণ জলাভূমিজুড়ে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এই বিল-ঝিলের শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন বেশকিছু  দরিদ্র মানুষ।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার তাগিদে মানুষগুলো ছুটে যায় জলাভূমির বুক থেকে শাপলা তোলার জন্য। শাপলা তুলে ভরদুপুরে তা একসঙ্গে করে বাজারে বিক্রি করেন। আর এই আয় থেকেই চলে তাদের সংসার।

বছরের অন্যান্য সময় কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার পর বিলে, নদীনালায় পানি থাকায় এসব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। তখন জীবন ধারণ করা কার্যত অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এসময়টাতে শাপলা বিক্রি করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিন কাটায় কিছু পরিবার।

ভাদ্র  থেকে আশ্বিন পর্যন্তও বিলে আর ছোট নদীতে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এ সময়টাতে তারা অন্যান্য সময় থেকে বেশি শাপলা তুলতে পারেন। পানি যত গভীর, সেখানকার শাপলা তত ভালো হয়।
চৌহালী  উপজেলার বিভিন্ন বিল-ঝিল ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে এখন অথৈ পানি।

ডিঙিনৌকা দিয়ে কেউ বিলে মাছ ধরছেন, কেউবা আগাছা পরিষ্কার করে নৌকা নিয়ে বিলের গহীনে যাচ্ছেন শাপলা তুলতে। আবার কেউ বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছেন নৌকায়। নৌকায় করে শাপলা এনে বাজারে বিক্রি করার জন্য মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন তারা।

স্থানীয় সামাদ মোল্ল্যা বলেন, তিনি জন্মের পর থেকেই এসব বিলে শাপলা ফুল ফুটতে দেখছেন। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজার ও  বিভিন্ন হাট-বাজারে  বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে বিলের পার্শ্ববর্তী এলাকার অসংখ্য পরিবার।

স্থানীয়  ব্যক্তিরা জানান, বছরের পাঁচ মাসই এসব বিলে ফোটে শাপলা আর অনেক পরিবার শাপলার ওপর নির্ভরশীল হয়। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

বিলে আষাঢ় থেকে শুরু করে কার্তিক এবং ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্তও শাপলা পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করা ময়নুল হক জানান, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে  কাজ না থাকায় শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করি। অন্য সময় থেকে এ সময়টাতে খুব সচ্ছলভাবে চলতে পারি।

বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকালে আমরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে শাপলা তুলতে যাই। প্রতিটি দলে ১০-১২ সদস্য থাকে। প্রতি দল মিলে দুই-আড়াইশ কুড়ি (প্রতি কুড়িতে ২০০-৩০০টি) শাপলা তুলতে পারি। আর এতে আমাদের জনপ্রতি  বেশ ভালোই আয় হয়, যা বছরের অন্য সময় থেকে বেশি।

কোদালিয়া গ্রামের মজনু মোল্যা বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষগুলোর সারা বছর খুব কষ্ট করতে হয়। তিন বেলা খাবার জোটানো খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এ মৌসুমে আমরা খুব ভালোভাবে চলতে পারি। এসব কাজে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও অংশগ্রহণ করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার জেরিন আহমেদ বলেন, শাপলা প্রাকৃতিকভাবে পুরাতন বিল-ঝিলে জন্মে। এর চাষ পদ্ধতি এখনো প্রচলিত হয়নি। শাপলা সাধারণ সবজি থেকে অনেক বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর।

এতে আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। অ্যালার্জি, চর্মরোগ, আমাশয়, অ্যাসিডিটিতেও এটা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানসিক রোগেও এর ব্যবহার করা হয়। ফলে সবজি হিসেবে বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে অনেক।  

Link copied!