Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

আরসা-সেনা সংঘর্ষে সীমান্তে উত্তাপ

মো. মাসুম বিল্লাহ

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২, ১২:৪৪ এএম


আরসা-সেনা সংঘর্ষে সীমান্তে উত্তাপ

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরসা ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এখনো সংঘর্ষ চলছে। তার উত্তাপ ছড়িয়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। দুদিন বন্ধ থাকার পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় আবারো ভারী গোলাবারুদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে; এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উত্তেজনা বাড়তে থাকায় সেখানে সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন থেকে এই সড়কটি নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্ঘাতের মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দারা। বোমার শব্দে কাঁপছে পুরো এলাকা, সীমান্তবর্তী    নাগরিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী।

সীমান্তের এলাকাবাসীরা মনে করছেন— এভাবে ঘটনা ঘটতে থাকলে আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। যা বাংলাদেশের ঠেকানো কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে দেশে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে ফেলেছে। নিয়মিতই দেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা বাড়ছে। বহু পথ অনুসরণ করে রোহিঙ্গারা এখনো দেশে ঢুকছে। অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম দিচ্ছে। দিন যতই ঘড়াচ্ছে ততই প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করে। সঙ্ঘাতের মধ্যে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল এসে পড়ে। এরপর ৩১ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরতলীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে বলে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়। আরাকান আর্মির দখলে নেয়া পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিতে সেনাবাহিনী এগোচ্ছে। এর মধ্যে গত শনিবার মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে। এসব ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে দুইবার ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, এটি উসকানিমূলক নয়। এটি স্ট্রে (আকস্মিক চলে এসেছে)। টানা তিন সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার পর রোববার ও সোমবার কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেলেও কোনো যুদ্ধবিমান বা ফাইটিং হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোলাগুলির কারণে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। তারা সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা করছেন। সীমান্ত এলাকায় রাবার বাগানে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তাদের সরিয়ে য়ো হয়েছে। আপাতত সেখানে শ্রমিকরা কাজ করতে যাচ্ছেন না।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার আগে থেকে সীমান্তের ওপারে ভারী গোলাবারুদের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর শুধু গুলির আওয়াজ আসে। মনে হচ্ছে, আমাদের পুরো সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। এখন যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়— এর অবস্থা আমাদের। সবাই ভয় ও আতঙ্কে আছে। কিন্তু এলাকা ছেড়ে যাবো কোথায়? সীমান্ত এলাকাবাসী আপাতত যার যার ঘরে অবস্থান করছে। সীমান্তজুড়ে এখনো বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কবাস্থায় রয়েছে জানান স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আমাকে সকাল থেকে গোলাগুলির খবর জানিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব জরুরি না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তারা যেন ঘরের ভেতরে থাকেন। বাচ্চাদের ঘরে রাখেন।

অনেক সময় দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা গভীর বনে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে যান এবং সেখানে পাহাড়ের ঢালে অনেকেই জুমচাষও করে থাকেন। যেহেতু সেখানে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে— তাই আপাতত তাদেরকে এসব কাজ কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকও গোলাগুলির তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান ইউএনও সালমা ইসলাম। তিনি আরও বলেন, গত দুদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকায় অনেকে শিক্ষার্থী স্কুলে আসছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে আবার গোলাগুলি শুরু হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা সীমান্তের ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। আমরা সবাইকে প্রতি মুহূর্তের আপডেট জানানোর জন্য বলেছি এবং সঙ্ঘাতপ্রবণ সীমান্ত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছি। এলাকায় বিজিবির টহল চলছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। গোটা পরিস্থিতিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যোগ করেন ইউএনও।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা ৬২১টি পরিবারে চার হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এখনো তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ার শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। গোলাগুলির কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে রোববার বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যে জায়গাগুলোতে এটি (গোলাগুলি) হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গারা থাকে না। রোহিঙ্গারা থাকে ঠিক তার বিপরীত দিকে, ইস্টার্ন সাইটে। এটি হচ্ছে পশ্চিমে, আমাদের বর্ডার ঘেঁষে একেবারে। যে জায়গাটি এরই মধ্যে একেবারেই রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

শূন্যরেখার অবস্থান করা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো ছিল না, এখন অবশ্যই কিছুটা হলেও আছে। সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা কমেন্ট করতে চাই না। আমরা এবার অন্ততঃপক্ষে কোনো ঢলের শঙ্কা করছি না বা আশাও করছি না।

সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন-২০ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ রিয়াসত আজিম জানিয়েছেন, সীমান্ত উত্তেজনার কারণে গত ১৫ দিন থেকে সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
 

Link copied!