সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২, ১২:৫৩ এএম
জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত (মহিলা) আসনের সদস্য পদপ্রার্থীরা। তারা নিজেদের সমর্থন আদায়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সমর্থন আদায়ে চেষ্টার করছেন।
মেম্বার, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেয়রদের সাথে মতবিনিময় এবং আলোচনা সভা করছেন সকাল-সন্ধ্যা। নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন। বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। দলীয় সমর্থন আদায়ে কেউ কেউ স্থানীয় এমপি এবং জেলা-উপজেলা আ.লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসা-বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন।
বসে নেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারাও মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসাবাড়ি, ব্যক্তিগত ও দলীয় অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। তুলে ধরছেন নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান।
মূলত এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল। বর্তমান সরকার ও কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না আশার ঘোষণা দীর্ঘদিনের। নির্বাচনের মাঠে বিএনপি না থাকায় চেয়ারম্যান পদে নৌকা মনোনীতদের বিজয় অর্জন সহজ হবে বলে ধারণা করছেন প্রার্থীরা। এ জন্য সবার টার্গেট নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করা।
তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলীয় প্রতীকে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যানারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। ফলে প্রার্থী নির্ধারণে যোগ্যদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন জনগণের সাথে ভোটের বিষয় নয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভোট হবে। সে কারণেই কে প্রার্থী হচ্ছে! দল থেকে কাকে প্রার্থী করা হচ্ছে! সেগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে জেলা পরিষদে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত অবস্থান, ইমেজ, জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করেই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে।
ইসি সূত্রে, আগামী ১৭ অক্টোবর সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। এর আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, আপিল ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আসন্ন এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের কার্যক্রম করছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। যদিও এ নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই নতুন নির্বাচন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। মূলত বর্তমান কমিশন এবং সরকারের অধিনে আর কোনো নির্বাচনের না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেখে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থী স্থানীয় যুবলীগ নেতা সিরাজ সরকার। তিনি জেলার তাড়াশ উপজেলা থেকে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। স্থানীয় এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সিরাজ সরকার স্থানীয় মেম্বার, কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সমর্থন আদায়ে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা করছেন প্রতিদিন। নিজের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দিচ্ছেন নানামুখী প্রতিশ্রুতি।
সিরাজ সরকার আমার সংবাদকে জানান, সাধারণ মানুষ ও এলাকায় উন্নয়নে কাজ করার জন্যই জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সমাজের অবহেলিত, দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চান তিনি।
শরিয়তপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার জানান, তিনি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সব জনপ্রতিনিধির সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এলাকার উন্নয়নে সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। কাজের মধ্যে দিয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষে মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দিনের কর্মযজ্ঞ মাথায় রেখে এবারো প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার। নির্বাচনের মাঠে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি। জেলা পরিষদে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচিত হলে প্রতিটি এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, সামাজিক ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানেসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন করা যায় বলে দাবি করেন কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য মো. কামরুজ্জামান।
তিনি আমার সংবাদকে বলেন, দীর্ঘদিন জেলা পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করেছি। এই পদে থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কাজও করেছি। আশা করি এবারো আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো এবং এলাকায় উন্নয়ন অব্যাহত লাখব। মো. কামরুজ্জামান কটিয়াদী থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা থেকে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য কাজ করছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক মো. আতাউর রহমান উজ্জল।
তিনি আমার সংবাদকে বলেন, গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে সময় আওয়ামী লীগ থেকে একজন প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সমর্থন দেয়া হয়। সে কারণে আমি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হইনি। কিন্তু এবার নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। দল ও দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরাও আমার পাশে আছে। আশা করি আমি নির্বাচিত হবো।