সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৪৪ এএম
জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত অর্থের অপব্যবহার, পরিষদে সিন্ডিকেট তৈরি, ভূমিদখল এবং নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি প্রায় অর্ধেক চেয়ারম্যান। অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে দলটির সমর্থন পেয়েছেন ক্লিন ইমেজের নেতারা।
জেলা পরিষদে বিতর্কিত চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন বার্তা। এই ধরনের অভিযোগ যদি কোনো সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে থাকে, তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করতে গত শনিবার দলের মনোনয়ন বোর্ডসভায় বসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই এবং বিশ্লেষণ করে ৬০ জেলায় দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করে আওয়ামী লীগ।
৩১ জেলা পরিষদে নতুন মুখ বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাদ পড়েছেন গত নির্বাচনের বিদ্রোহী এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও বিতর্কিতরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতির কঠোর অবস্থান দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
তাদের দাবি— জেলা পরিষদে বিতর্কিত চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন না পাওয়া এমপিদের জন্য সতর্কবার্তা। কোনো এমপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলে সংসদ নির্বাচনে তাকে আর মনোনয়ন দেয়া হবে না। এটা আওয়ামী লীগের পরিষ্কার ম্যাসেজ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, গত নির্বাচনে কিছু বিদ্রোহী ছিল, কিছু চেয়ারম্যানের স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না এবং কিছু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ ছিল। ফলে এদের আমরা মনোনয়ন দেইনি। বিতর্কিতদের কিন্তু কোনোভাবেই আর মনোনয়ন দেয়া হবে না। বিগত দিনে যারা বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছে, তাদেরও মনোনয়ন দেয়া হবে না। এটাই আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত। দলের এমন সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিতর্কিতদের জন্য সতর্কবার্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম। সেখানে দলটির সমর্থন পেয়েছেন মো. সদর উদ্দিন খান। জানা যায়, হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিক ব্যবহার না করা, সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি দখল, জেলা পরিষদের ইকোপার্কের অর্থ হরিলুট, ভূমিদখল, পছন্দের লোক দিয়ে জেলা পরিষদে সিন্ডিকেট তৈরি করা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে উঠা শতকোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুদকের সেই মামলা এখনো তার বিরুদ্ধে চলমান বলে জানা গেছে। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব-কোন্দল এবং দূরত্বও তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কারণেই এবার দলীয় সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবার সমর্থন পায়নি রেজাউর রহমান লাল। সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন আ স ম আব্দুর রহিম পাকন। জানা যায়, জেলা পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার পর জনসেবায় ব্যর্থ রেজাউর রহমান লাল। তার কর্মকাণ্ডের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সে কারণেই এবার মনোনয়ন পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা আমার সংবাদকে বলেন, এ পদে থেকে জনসেবা করার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি দৃশ্যমান কিছু করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বরিশাল জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. কে এম জাহাঙ্গীর। টানা দুইবার নির্বাচিত হলেও এবার দলীয় সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম।
জানা যায়, পরপর দুইবার আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন মাইদুল। দীর্ঘদিন ক্ষমতার অপব্যবহার, জেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের সাথে দূরত্ব এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মতবিরোধ থাকায় এবার দলীয় সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন তিনি।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং নেতাকর্মীদের সাথে সু-সম্পর্ক না থাকায় ঝালকাঠি জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন টানা তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার মোহাম্মদ শাহ আলম। সেখানে দলটির সমর্থন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, আলহাজ সরদার মোহাম্মদ শাহ আলমের অনেক বয়স হয়েছে। এছাড়া তার বেশকিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আছে। ফলে স্থানীয় নেতারা তাকে আর সমর্থন করতে চান না। নতুন মুখ মনোনয়ন পাওয়ায় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদ নির্বাচনে আ.লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. আবু তৈয়বুর রহমান। এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি মো. আনোয়ার সাদাত। দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকায় নানামুখী অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন আনোয়ার সাদাত। ফলে এবার আর দলীয় সমর্থন পাননি তিনি। এছাড়া যে সব জেলায় সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছু চেয়ারম্যানের শরীর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।