ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে এম এ কালাম
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ১২:৫৩ এএম
ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে এম এ কালাম
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ১২:৫৩ এএম
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত মাসের মাঝামাঝি থেকে চলছে গোলাগুলির প্রকট আওয়াজ। এপারের বাংলাদেশ ভূখণ্ডের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তঘেঁষা এলাকায় ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেলসহ ভারীর অস্ত্রের গুলি।
জানা যায়, মিয়ানমারের বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা রাখাইন রাজ্যে সেখানকার বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে প্রায় এক মাস ধরে মিয়ানমার সেনাদের সাথে তুমুল লড়াই চলছে। মাঝে মধ্যে ওখানকার ছোড়া গুলি আর ভারী মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডেও। অব্যাহতভাবে চলা এ সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে সীমান্ত এলাকায়। এ কারণে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। গত দুদিনে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা ঘুমধুমের পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।
১২ সেপ্টেম্বর সকালে সীমান্তে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে আরও হাজারো রোহিঙ্গা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়িসহ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুমধুমের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে সংঘর্ষ চলছে তাতে মিয়ানমারের ভূখণ্ড থেকে চালানো ভারী অস্ত্রের গুলি ও মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই দেশে সংঘর্ষের অজুহাতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে। সীমান্তে কড়া নজর না রাখলে ঠিক আগের মতো আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার এশারা বেগম (২৭), সাদেক হোসেন (৪০), মো. তাহের (১৩), মো. শরীফ (৯), বিবি আয়েশা (৭) ও বিবি জান্নাত (৩) পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফের অভিযান শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা শান্ত। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো ত্রাণের কথা জেনে তারা বাংলাদেশে চলে আসছেন। কারণ রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের মাত্রা একটু কমলেও রোহিঙ্গাদের কোনো কাজে বের হতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা রোহিঙ্গারা তাই বাংলাদেশে ছুটছেন। ঘুমধুমের পার্শ্ববর্তী পালংখালী ইউনিয়নের থ্যাংখালী ক্যাম্প-১৯-এর ব্লক-১৬ এর মাঝি আবুল কাসেম (ছদ্মনাম) জানান, কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। বিষয়টি ক্যাম্প ইনচার্জ বরাবর জানানো হয়েছে। তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে নেয়া হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে ওই দেশের বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বেশকিছু গুলি আর ভারী মর্টারশেল আমাদের ভূখণ্ডে পড়েছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তের মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে আতঙ্কে। এছাড়া মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান সীমান্তঘেঁষে আনাগোনা করতে দেখা যায়।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের বলিবাজার ও সাপ বাজার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, কক্সবাজার জেলার আওতাধীন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার খবর পেয়েছি। তবে অনুপ্রবেশটি কতটুকু সত্য তা খবর নেয়ার চেষ্টা করছি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের পয়েন্টগুলো কড়া নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখনো সেই রকম রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো তথ্য আমরা পাইনি। বিষয়টি দেখছি।