সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২, ০১:২৪ এএম
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে বিধিবহির্ভূতভাবে ২০ জনের বেশি কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি শুরু হয় (যোগদান) সুইপার-ঝাড়ুদার হিসেবে। একজন করে মালি এবং ফার্ম লেবার। ২০ গ্রেড থেকে তাদের ১৬তম গ্রেড তথা ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
গত ৯-১৪ সেপ্টেম্বর কম্পিউটার মুদ্রাক্ষর লিখনের গতি পরীক্ষা নেয়া হয় প্রায় ৭০০ জনের। এদের মধ্য থেকে ১৭৯ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই পদোন্নতিতে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ করেছেন পদোন্নতি বঞ্চিত অনেকে। তাদের ভাষ্য দু-চার লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে পদোন্নতির জন্য। আমরা যারা দিতে পারিনি তাদের যোগ্যতা সত্ত্বেও পদোন্নতি হয়নি।
‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৭ আগস্ট কম্পিউটার মুদ্রাক্ষর লিখনের গতি পরীক্ষার জন্য ৯-১৪ সেপ্টেম্বর দিনক্ষণ ঠিক করে দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সদর দপ্তর ও মাঠপর্যায়ের অফিসসমূহে কর্মরত ডুপ্লিকেটিং-ফটোস্ট্যাট মেশিন অপারেটর, ক্যাশ সরকার, অফিস সহায়ক (উচ্চ স্কেল), রেকর্ড সাপ্লাইয়ার, ক্যাশগার্ড, অফিস সহায়ক, বার্তাবাহক, অফিস অ্যাটেন্ডেট, নিরাপত্তা প্রহরি ও ওয়াচম্যান পদধারীদের চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতার তালিকা মোতাবেক ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে পদোন্নতির জন্য কম্পিউটার মুদ্রাক্ষর লিখনের গতি নির্ধারণ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।
এ অনুযায়ী সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০-১৯তম গ্রেড থেকে ১৬তম গ্রেডে পদোন্নতির জন্য (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক) ১৭৯ জনের উত্তীর্ণের ঘোষণা দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম স্বাক্ষরিত এই তালিকায় দেখা যায়, ক্রমিক নং ৯, ১০, ১১, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫,৫৬,৫৭,৫৮,৫৯, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪) মোট ১৮ জনের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রথম যোগদান ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ হিসেবে।
অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের পদোন্নতির যোগ্যতা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে সুইপার-ঝাড়ুদারের কথা উল্লেখ নেই।
২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনে বিভাগীয় বাছাই ও নির্বাচন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধিদপ্তরে সরকারি চাকরিতে প্রথম যোগদান ‘সুইপার-ঝাড়দার’ পদধারীদের পরবর্তী পদোন্নতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত জারি হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫, ২০১৫ ও ২০১৯ এ ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ পদোধারীদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি পদটি ‘ব্লক পোস্ট’ হিসেবেই গণ্য আছে। জাতীয়ভাবে ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ পদটি হরিজন সমপ্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত বিধায় পদটি পরবর্তী পদোন্নতি প্রদান করলে সরকারি বিধি বিধান লঙ্ঘনের সামিল এবং অফিসের চেইন অব কমান্ড থাকবে না। ইতোপূর্বে ২০১৭ সনে ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ পদধারী কম্পিউটার মুদ্রাক্ষর গতি নির্ধারণ পরীক্ষায় পাস করলেও তাদের অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি।
শুধু তাই নয়, ১৭৯ জনের মধ্যে একজন ফার্মলেবার (ক্রমিক নং-১২) ও একজন মালীও (ক্রমিক নং-১৭৯) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতির তালিকায় রয়েছেন। উত্তীর্ণদের অনেকে ভালো করে কম্পিউটার টাইপও পারেন না। প্রক্সি দিয়ে অনেকে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, উত্তীর্ণদের ফের টাইপিং পরীক্ষা নিলেই অনেকেই ব্যর্থ হবেন।
এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহান আমার সংবাদকে বলেন, আমার জানামতে এখানে ঝাড়ুদার নেই। এখানে অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরীরা পদোন্নতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় তো আমি ছিলাম, কম্পিউটার টাইপ জানে না এমন কাউকে তো নেয়া হয়নি। পরীক্ষা দিয়েছে তো প্রায় ৭০০ জন, সেখান থেকে ১৭৯ জনকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
২০ জন ঝাড়ুদার এখানে নিয়োগ পেয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখনো তো ফাইনাল প্রমোশন আমরা দেইনি। এটা আমরা দেখব। যারা পাস করছে তাদের একটা লিস্ট আমরা দিয়েছি। এখনো ফাইনাল হয়নি। যখন মিটিং হবে ডিপিসি হবে তখন আমরা দেখব কোন কোন প্রার্থীর ব্লক পোস্ট আছে, কাদের দেয়া যাবে আর কাদের দেয়া যাবে না। সেটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই হবে বলে জানান সরকারের এ কর্মকর্তা।
কমিটির আরেক সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সম্প্রসারণ উইং) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এটার যে নিয়োগবিধি আছে তা গ্রেডেশন করেছে ডিজি অফিস। আমরা শুধু পরীক্ষা নিয়েছি।
তিনি বলেন, পদোন্নতি হয়ে গেছে বিষয়টা এরকম না। আমরা কম্পিউটার টেস্ট নিয়েছি। এরপর বসব তাদের অনেক কাগজপত্র আছে যাচাই-বাছাই হবে, এরপর ফাইনাল করা হবে। ডিপিসি চূড়ান্ত হওয়ার আগে অভিযোগ থাকলে তা অবশ্যই দেখা হবে।