আহমেদ হৃদয়
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২, ০১:২৫ এএম
আহমেদ হৃদয়
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২, ০১:২৫ এএম
রাজধানী ঢাকার রাজপথে ছাদখোলা একটি বাস; বাসের গায়ে লেখা ছিল চ্যাম্পিয়ন। তার উপরে উল্লাস করছে সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন বাংলার বাঘিনীরা। ট্রফি উঁচিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের মেয়েরা। এ যেন পুরো বাঙালি জাতির গর্ব। এমন একটি দিন এর আগে কবে দেখেছে বাংলাদেশ! বাংলার বাঘিনীদের এমন পদার্পণ এই তো প্রথম। এমন একটি দিনকেই হয়তো বলে হার না মানা। এমন একটি সময়কেই হয়তো বলে জিতে যাওয়া। এমন একটি দিনেই নতুন করে স্বপ্ন দেখে দেশের ফুটবল। এরাই তো বাংলার ভবিষ্যত। এই মেয়েরাই তো জয় করে এসেছে হিমালয়। সেদিন লাল-সবুজের রামধনুতে রাঙিয়ে দিয়েছিল হিমালয়ের আকাশ।
সেই লাল-সবুজের রামধনুই যেন অবাক হয়ে দেখল পুরো বিশ্ব। দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। পুরো দেশ বরণ করে নিয়েছে বাংলার বাঘিনীদের। ট্রফি নিয়ে নেপাল থেকে গতকাল দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান চ্যাম্পিয়নরা। দেশে ফিরে সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলাররা। বিমানবন্দরে তাদের ফুলের মালা ও চ্যাম্পিয়ন লেখা উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বিমানবন্দরের বাইরে বাংলাদেশের স্বর্ণকন্যাদের বরণ করে নিতে উপস্থিত ছিলেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী। যা দেখে উদ্বেলিত হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা, ভেসেছেন আবেগ-উচ্ছ্বাসে। চ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবিনাদের। আর তাতেই আবেগাপ্লুত হয়ে সাফের শিরোপাটি দেশের সব মানুষকে উৎসর্গ করেছেন অধিনায়কসাবিনা খাতুন।
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমে সাবিনা বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটি, এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের। আমাদের এত সুন্দর করে বরণ করে নেয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী মহোদয় ও ফেডারেশনের যারা এসেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মেয়েদের, বাংলাদেশের ফুটবল যে আপনারা এত ভালোবাসেন, এসব দেখে আমরা অনেক অনেক গর্বিত। আমাদের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন স্যার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে মহিলা ফুটবল ভালোভাবে চলছে।
মেয়েদের পরিশ্রম যদি দেখেন, চার-পাঁচ বছরের সাফল্য দেখেন, এতেই সব বোঝা যায়। সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে সামনের দিকে আরও কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটন এভাবে নারী দলকে সমর্থন দেয়ার জন্য এবং তাদের বরণ করে নেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ইউরোপের ফুটবলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শিরোপা জয়ের পর ছাদখোলা বাসে শোভাযাত্রায় বের হয় দল। রাস্তার চারপাশে সমর্থক জড়ো হয়ে শুভেচ্ছা জানান খেলোয়াড়দের। নারী ফুটবল দলের সাফজয়ের সৌজন্যে এমন কিছু দেখা গেল বাংলাদেশেও। বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে খেলোয়াড়দের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিমানবন্দর থেকে মেয়েদের বহনকারী বাস কাকলী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মৌচাক, কাকরাইল, আরামবাগ, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে আসে বাফুফে ভবনে। পুরো রাস্তায় ছিল জনতার ভিড়। গর্বিত মেয়েদের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। রাস্তার পাশ থেকে হাজার হাজার জনতার হাত শুভেচ্ছা জানায় চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের।
পথে পথে শুভেচ্ছায় ভেসেছেন চ্যাম্পিয়ন দল : বিমানবন্দর থেকে ছাদ খোলা বাসে চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা উল্লাস করতে করতে ফিরেছেন বাফুফে ভবনে। রাস্তার দুই ধারে মানুষ। কেউ ছুটছেন, কেউ দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন। যারা গাড়িতে আছেন তারাও সাবিনাদের ছাদখোলা ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাসের দিকে তাকিয়ে আছেন। চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাবিনা। তার সতীর্থরা শুভেচ্ছার জবাব দিচ্ছেন দেশের পতাকা নাড়িয়ে। বিমানবন্দর থেকে সাবিনাদের গাড়ি বের হওয়ার পর থেকে পুরো পথজুড়ে এই চিত্র দেখা গেছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভাবনীয় এই দৃশ্য উপভোগে প্রতিটি সড়কেই মানুষের জটলা। সাবিনাদের চ্যাম্পিয়ন বাস খানিকটা ধীর গতিতে যাচ্ছে। পেছনে ও আশপাশে মিডিয়া ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের অনেক গাড়িও পথ চলছে একই সাথে। সাবিনাদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাসে উঠেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপিও। তার সাথে উঠেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিক, দলের ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে। বিমানবন্দরে সকাল থেকেই উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। সাবিনারা ভিভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশের পরপরই মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে প্রেস কনফারেন্স নির্ধারিত জায়গায় হয়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর ভিভিআইপি গেটের সামনে অধিনায়ক সাবিনা মিনিট দুয়েকের জন্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এ ট্রফি দেশবাসীর জন্য, ১৮ কোটি মানুষের জন্য। বিমানবন্দরে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনসহ অনেক সংস্থা ও ব্যক্তি সাবিনাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সালাম মুর্শেদীর স্ত্রীর ৫০ লাখ টাকা ঘোষণা: একের পর এক সুখবর পাচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সকালে সবার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। এর কিছুক্ষণ পর বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক তমা গ্রুপের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন। এবার আরেকটি ৫০ লাখ টাকার ঘোষণা এসেছে। নতুন করে সাবিনাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিলেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর স্ত্রী শারমিন সালাম। তিনি বলেছেন, নারী দলের সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান শারমিন সালাম নারী দলকে গ্রুপের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। শিগগিরই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী দলকে এই অর্থ হস্তান্তর করা হবে।
সাফজয়ী কলসিন্দুর-কন্যাদের পরিবার পাচ্ছে চার লাখ টাকা : সাফজয়ী ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের আট নারী ফুটবালারের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট চার লাখ টাকা পুরস্কার দেবে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে এ ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট নারী ফুটবলারের পরিবারকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হবে। একই সাথে প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট চার লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। ময়মনসিংহ নগরী থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড়ের কোলে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম। এ গ্রাম থেকেই বেড়ে উঠেছে একঝাঁক নারী ফুটবলার। যাদের আটজনই ছিলেন সদ্য সাফজয়ী টিমে। সানজিদা, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, মারজিয়া আক্তার, শামছুননাহার সিনিয়র, তহুরা, সাজেদা, শামছুননাহার জুনিয়রদের এমন সাফল্যে তাই গর্বিত কলসিন্দুর তথা গোটা ময়মনসিংহবাসী। এদিকে কলসিন্দুর গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। অধীর আগ্রহে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী সানজিদা, মারিয়াদের বরণ করার অপেক্ষায় আছেন তারা।
চ্যাম্পিয়নদের ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন বাফুফে সহ-সভাপতি মানিক : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের সাফল্যে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে গোটা দেশ। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনায় বাঘিনীদের জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন বাফুফে সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। নারী দলকে বরণ করে নিতে বাফুফে কর্মকর্তারা আগে থেকেই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নারী দলকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেন বাফুফে সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। এর আগে সমপরিমাণ অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি।