সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০১:৪৩ এএম
জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠে সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদেই মূল লড়াই। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ না করা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রায় অর্ধেক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ও দলীয় বিদ্রোহী বিষয়ে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের কারণে দৃষ্টি সদস্য পদে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে মাঠে তৎপর স্থানীয় সংসদ সদস্য।
পছন্দের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। জেলা পরিষদেও আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া বিদ্রোহী। দলের কঠোর অস্থানেও মাঠ ছাড়েনি তারা। যদিও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত করতে বিদ্রোহীতে অনেক নমনীয় আওয়ামী লীগ বলে মনে করা হচ্ছে। ইসি সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৭ই অক্টোবর সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি।
সর্বশেষ গতকাল চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রার্থীদের তালিকা। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নির্বাচনি প্রতীক। এবার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের মোট ৬৩ হাজারেরও বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৭, সংরক্ষিত নারী পদে ১৯ ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১১৪ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। গতকাল সোমবার সারা দেশে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পরপরই প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। তারা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটারের ভোট ও সাধারণ মানুষের দোয়া প্রত্যাশা করেন। পুরো নির্বাচনি এলাকায় সাঁটানো হয় ব্যানার, ফেস্টুন ও বড় বড় বিলবোর্ড। প্রতীক পেয়ে ফের ওয়ার্ড মেম্বর, মহিলা মেম্বর, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের দ্বারে ঘুরতে শুরু করেছেন প্রার্থীরা। তারা নিজেদের জন্য ভোট ও সমর্থন প্রার্থনা করছেন।
বিএনপিবিহীন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া দলীয় বিদ্রোহী। দলটির শীর্ষ নেতাদের কঠোর অবস্থানেও শেষ মুহূর্তে মাঠে রয়েছেন বিদ্রোহীরা। ফলে ভোটের মাঠে বিএনপি না থাকলেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটিকে। অভিযোগ রয়েছে— এসব বিদ্রোহীকে ইন্ধন দিচ্ছেন জেলার প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য। তাদের পছন্দের প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তারা। ফলে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। স্থানীয় এমপিদের এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দাখিলের ঘটনাও ঘটেছে। একই সাথে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও উঠেছে।
যদিও আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, বিএনপিবিহীন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত করতে বিদ্রোহীদের বিষয়ে কিছুটা নমনীয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে— সে জন্য বিদ্রোহীদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
তবে ক্ষমতাসীনদের অন্য একটি সূত্রে বলছে, জেলা পরিষদে নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত। তারা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় ভোটার। বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতেন। কিন্তু যেন নির্বাচনের মাঠে দলীয় বিদ্রোহী দলের জন্য খারাপ। বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল, বিভেদ-বিভাজন এবং দলীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করেন দলীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ও সংসদ সদস্যরা। নেতা ও কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জেলা পরিষদে বিদ্রোহীরা থাকা দলের জন্য ভালো কিছু নয়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘কিছু স্থানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিছু স্থানে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনেক ভালো ও গ্রহণযোগ্য হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীদের মধ্যে। তারা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। কারণ আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিশ্বাসী। কাজেই নির্বাচন এলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়। দলীয় কর্মীদের উৎসবমুখর করতে সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিদ্রোহীরা সবসময় দলের জন্য ক্ষতিকর। তারা দলের ঐক্য নষ্ট করে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে।