Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪,

ইডেনে কেন্দ্রের অনুসারী কে

মো. মাসুম বিল্লাহ

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ০৯:৫১ এএম


ইডেনে কেন্দ্রের অনুসারী কে

আবারো ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইডেন মহিলা কলেজ। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সিটবাণিজ্য, মারধর ও দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ইডেন ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব বিষয়ে সমাধানে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

গত রোববার মধ্যরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে, বহিষ্কারের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক নেত্রী। তাদের অভিযোগ, বহিষ্কার হওয়ারা কেউই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছের অনুসারী নন। নিজেদের আক্রোশ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, আগের ঘটনা এবং গতকালের (রোববার) ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পুরো ঘটনার মধ্যে যারা জড়িত আছে, ইতোমধ্যে কলেজ প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা তাদের মতো করে জানাবে। তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

লেখক ভট্টাচার্য বলেন, তারা (ইডেন ছাত্রলীগের একাংশ) সংবাদ মাধ্যমে যে ধরনের অভিযোগ করেছে, তার একটি প্রমাণও দেখাতে পারেনি। রোববার রাতের ঘটনা শিক্ষকদের সামনে ঘটেছে। তাদের সাথে কথা বলেছি, ভিডিও ফুটেজও দেখেছি। তারপর আর তদন্ত করার দরকার নেই। বহিষ্কারের ক্ষেত্রে সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি সরাসরি যুক্ত হয়েছে, আমরা বহিষ্কার করেছি।

গতকাল বহিষ্কারের বিষয়ে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈই বলেন, ভিডিও ফুটেজে ছাত্রলীগ নেত্রী রিতু আক্তার, তানজিনা, জ্যোতিসহ আরও অনেকেই ছিল, তাদের কেন বহিষ্কার করা হলো না? আমাদের কেন বহিষ্কার করা হলো?

তিনি বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পছন্দ করেন না বলেই আমাদের বহিষ্কার করেছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এ কাজ করা হয়েছে।

কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে থাকা বেনজির হোসেন নিশি তারই সহযোদ্ধা রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বীকে মারধরের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি। সেই মামলা এখনো চলমান। অথচ তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। আর তাকেই পাঠানো হয়েছে আমাদের ঘটনার তদন্ত করতে!’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের ভাষ্য মতে, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে, কিন্তু কোনো কারণে শুধু একটি গ্রুপকে গণহারে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে সুষ্ঠু জবাব দিতে হবে।’

বহিষ্কারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি অভিযোগ করে বৈশাখি বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিটে কোনো সমস্যা হলে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। তাহলে কি তারা এই অন্যায়ের ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করছে? কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছ থেকে আমরা এর জবাব চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বহিষ্কারাদেশ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের একমাত্র অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অনশনের ঘোষণা থেকে সরে এলেন বহিষ্কৃত নেত্রীরা : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা থেকে সরে এসেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীরা। গতকাল সোমবার সকালে কলেজ গেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আমরণ অনশনের এই ঘোষণা দিয়ে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর কার্যালয় যান ১২ বহিষ্কৃত নেত্রী। ঘণ্টাখানেক পর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান তারা। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোনালি আক্তার বলেন, আমাদের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে, সেটি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানিয়েছি। আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন, এ কারণে আমরা অনশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখছি।

উল্লেখ্য, গত রোববার মধ্যরাতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ জনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। স্থায়ী বহিষ্কার হওয়াদের মধ্যে ১০ জন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আর চারজন কর্মী। তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ করে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এটির প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া ছাত্রীরা হলেন— ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা ঊর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি ও সাদিয়া জাহান সাথী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি ও কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা এবং সূচনা আক্তার।
 

Link copied!