Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

শিগগিরই বিদ্যুতের পাইকারি দাম ঘোষণা

মহিউদ্দিন রাব্বানি

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:১০ এএম


শিগগিরই বিদ্যুতের পাইকারি দাম ঘোষণা

শিগগিরই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। তবে পাইকারি মূল্যহার বাড়লেও আপাতত বাড়ছে না বিদ্যুতের খুচরা মূল্য। বিদ্যুৎ উৎপাদনে লোকসান গুনছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে অর্থমন্ত্রণালয়ে বাড়ছে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ। বিদ্যুৎ খাতে এত ভর্তুকি দিতে নারাজ অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বলেছে।

এদিকে ভর্তুকির দায়ে পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। যা গত ১৮ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি শুনানি করেছে। শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব ও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন।  

সংস্থাটির আইন অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে আদেশ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নতুন দামের ঘোষণা আসবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

বিইআরসি সূত্র বলছে, সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই তারা নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। তবে এখানে ভর্তুকির বিষয় রয়েছে। সরকার ভর্তুকি বাড়াতে সম্মত হলে দাম নাও বাড়তে পারে। তবে যদি বাড়ে সেটা ২০ শতাংশের বেশি হবে না। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে গত রোববার বিদ্যুৎ বিভাগকে দাম বাড়নো বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গত ৫ জুন আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানির সিদ্ধান্ত আসার আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

এদিকে বিইআরসির এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের সম্মতিও পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, ১ অক্টোবর থেকে নতুন দামের ঘোষণা কার্যকর হতে পারে। বিইআরসি আইন অনুযায়ী, গণশুনানির পর ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মূল্যহার সমন্বয় বিষয়ে আদেশ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে শুনানির পর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে যথাক্রমে ৯, ২২, ১৯, ২০ ও ২১ দিন সরকারি কার্যদিবস রয়েছে। সে হিসাবে ২৮ সেপ্টেম্বরে ৯০ কার্যদিবস পূরণ হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি আমদানি সংকটে সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চলছে বিদ্যুতে সীমাহীন লোডশেডিং। এতে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, কিন্তু কেন্দ্র ভাড়া ঠিকই দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমায় দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে গত জুলাই মাসে বিইআরসিকে একটি চিঠি দিয়েছে ক্যাব। চিঠিতে পুনরায় শুনানি না করে আগের দাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে তারা।

এদিকে অক্টোবর থেকে পিডিবির কাছ থেকে বর্ধিত দামে বিদ্যুৎ কিনবে বিতরণ কোম্পানিগুলো। খরচ বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে তারা খুচরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেবে। সেই প্রস্তাবের ওপর শুনানি শেষে আগামী বছরের শুরুর দিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পাইকারি দাম ঘোষণা করা হবে। বিতরণ কোম্পানিগুলো মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়নি। তাই গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা দাম এখনই বাড়বে না। বিতরণ কোম্পানি আবেদন করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। ফলে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে নাকাল জনজীবন। শিল্প-বাণিজ্যের ওপর আরেকটি বড় ধাক্কা আসবে।  অনেক মানুষ দরিদ্র হবে। দরিদ্র হবে অতিদরিদ্র।

ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকার ডিজেল রিজার্ভের আশায় ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করেছে। এখন লোডশেডিংয়ে মানুষ অনেক কষ্ট পাচ্ছে। শিল্প উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে সব ধরনের খরচ। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি নেই; বরং অপচয় কমাতে পারলে দাম কমানো যায়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকার ভর্তুকি না দিলে পাইকারি মূল্যে প্রতি ইউনিটে দুই টাকা ৯৯ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়াবে আট টাকা ১৬ পয়সায়। তবে এই খাতে সরকার ভর্তুকি দিলে দাম অপরিবর্তিত (প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা) থাকবে।

বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২ দশমিক ১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪ দশমিক ২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে। বিপিডিবি বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা। পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রির পাশাপাশি নিজে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা আগ থেকেই নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে বলে আসছি। উৎপাদনে না গিয়ে আমরা পুরোটা আমদানিনির্ভর হয়ে গেছি। এ বিষয়ে জ্বালানি ও ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কিছুতেই ঠিক হবে না। সরকারের হাতে অনেক বিকল্প আছে। উৎপাদনে না গিয়ে আমরা আমদানিনির্ভর হওয়াতে এখন বড় ধাক্কা সামাল দেয়া হচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুৎ ছাড়া তো মানুষ চলতে পারবে না। এ জন্য গ্যাস বিদ্যুতের ব্যয় জোগান দিতে গিয়ে যার প্রভাব খাদ্যের ওপর পড়বে। খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এগুলোর প্রভাব অন্য জিনিসের ওপরও পড়বে। সব মািলয়ে চাপটা সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে বেশি।’

Link copied!