মাহমুদুল হাসান
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:১৬ এএম
মাহমুদুল হাসান
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০২:১৬ এএম
হূদরোগ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। দেশে হূদরোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে তামাক। হূদরোগে প্রতি বছর দেশে প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক।
এদিকে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (তিন কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করে। যা হূদরোগ পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলছে। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে ৬৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে হূদরোগ।
এমনকি দেশে মোট মৃত্যুর ১৭ শতাংশই হচ্ছে হূদরোগজনিত কারণে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে হূদরোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ইউজ হার্ট ফর এভরি হার্ট’। দিবসটি ঘিরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের মতে, হূদরোগে মৃত্যু সব ধরনের মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় ও অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর অর্ধেক। এমন তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে হূদরোগ বিশেজ্ঞরাও বলছেন, বর্তমান বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাচ্ছে হূদরোগে। পাশাপাশি দেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ১৭ শতাংশই হচ্ছে হূদরোগের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে ১৯ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত হূদরোগে মৃত্যুবরণ করে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হূদরোগে মারা যায়। যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি (জিবিডি) ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত অসুখে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ (তিন কোটি ৭৮ লাখ) তামাক ব্যবহার করছে। যা হূদরোগ পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশোধনীর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খসড়া সংশোধনীতে সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯০ শতাংশ করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে খসড়াটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে তামাক কোম্পানিগুলো।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাকজনিত হূদরোগ ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ অত্যন্ত সময়োপযোগী। তামাক কোম্পানির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না নিয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী হূদরোগ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন যৌথভাবে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনে সম্মত হয়। হার্ট দিবস সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন ১৯৯৭-৯৯ সেশনে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যান্থনি বেইস্ ডি লুনা। প্রথম হার্ট দিবসটি পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববারটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।