অক্টোবর ১, ২০২২, ০২:০০ এএম
মা-ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার লক্ষ্যে আগামী ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এই সময়ে ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণায় বাজারে চাহিদা বেড়েছে ইলিশের। ছোট থেকে বড় সব আকারের মাছের দামও বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ২০০ গ্রাম থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাছ রয়েছে। দাম ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। নিষেধাজ্ঞাকে সামনে রেখে বাজারে আকার ভেদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা।
পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আর কয়েকদিন পরই ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। তাই বাজারে মাছের সরবরাহ বেশি। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ ৫০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। গতকালও যে মাছ ৭০০ টাকা ছিল, সেটি আজ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। বর্তমান বাজারে ভোলা ও মনপুরা এলাকার মাছ বেশি আসছে।
ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আর মাত্র ছয়দিন কেনাবেচা হবে। বর্তমানে মাছের অফুরন্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে হঠাৎ করেই দাম কিছুটা বেড়েছে। সামনের কয়েকদিন আরও বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও অনেক। যারা সাপ্তাহিক বাজারে এসেছেন, তারা অন্তত পাঁচ কেজি পরিমাণ মাছ কিনছেন। কেউ কেউ আরও বেশি নিচ্ছেন। কারণ, নিষেধাজ্ঞার আগে আজই সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
বাজারের আসা ক্রেতা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, সকাল থেকে তিনটি বাজার ঘুরে এখানে এসেছি। ওইসব বাজারে দেড় কেজির বেশি ওজনের মাছের দাম চেয়েছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা। কিন্তু পাইকারি বাজারে এসে দেখলাম দাম কিছুটা কম। তবে একেবারেই যে কম, তা নয়।
তিনি বলেন, আমি এক হাজার ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিনলাম এক হাজার ৪০০ টাকায়। তবুও দামটা বেশি মনে হয়েছে। পাইকারি বাজার হিসেবে দাম আরও কম হওয়ার কথা ছিল। কারওয়ান বাজারের তথ্য মতে, ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকা, ৫০০ গ্রামের অধিক ওজনের মাছের কেজি ৬৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ৮০০ টাকা, ৮০০ থেকে এক কেজি ওজনের মাছের কেজি ৯৫০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া, এক কেজির বেশি ওজনের মাছের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছিলেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মতো এবারও এসব অসাধু ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না। ইলিশ সম্পদ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিনে অভিযানের পাশাপাশি এবার রাতেও অভিযান জোরদার করা হবে।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় বরফ কল বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। গত বছরের মতো এবারও অবৈধ জাল উৎপাদনস্থলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ পথে ইলিশ পাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইলিশ সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলায় নদীতে ড্রেজিং বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে যা যা করা দরকার তার সবই করতে হবে।