Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

মৎস্যজীবী লীগের ৫ নেতার অব্যাহতি

রফিকুল ইসলাম

অক্টোবর ৫, ২০২২, ০১:৩২ এএম


মৎস্যজীবী লীগের ৫ নেতার অব্যাহতি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ পালন করায় দলটির সহযোগী সংগঠন আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের পাঁচ নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া নেতারা হলেন— যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, রফিকুল ইসলাম খাঁ, ফিরোজ আহমেদ তালুকদার, দপ্তর সম্পাদক এম এইচ এনামুল হক রাজু এবং উপ-প্রচার সম্পাদক ইউসুফ আলী রাজু। গত সোমবার মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ পালন করার অপরাধে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন লায়ন শেখ আজগর নস্কর। অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কাউকে অব্যহতি বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা লায়ন শেখ আজগর নস্করের নেই বলে দাবি তাদের।     
 
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরে যান আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক  লায়ন শেখ আজগর নস্কর। তিনি দেশের বাইরে গেলেও সংগঠনের কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি সংগঠনের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার জন্য মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. সায়ীদুর রহমানকে নির্দেশনা দেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অনুযায়ী আলিমকে দায়িত্ব দেন সায়ীদুর রহমান। তবে নিজের অবর্তমানে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর।

কেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে এবং কেন অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হলো এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ সময় ওবায়দুল কাদেরের কাছে অভিযোগ দেয়া নেতাদের জেরার মুখে ফেলেন নস্কর। এরপর ওই শীর্ষ পাঁচ নেতাকে গত সোমবার আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ থেকে অব্যাহতি দেন  লায়ন শেখ আজগর নস্কর।

অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের দাবি, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ লায়ন শেখ আজগর নস্করের ব্যক্তিগত দোকান নয়। তিনি চাইলেই ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কাউকে সংগঠন থেকে অব্যহতি বা বহিষ্কার করতে পারেন না। তারা মনে করেন, কেউ সংগঠন পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের কারণ দর্শানের নোটিস দেয়া হয়। জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হয়। কিন্তু কোনো নোটিস ছাড়াই আমাদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই অব্যাহতি দেয়ার মূল কারণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ পালন করে একজনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা। এটি সম্পূর্ণ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের ব্যক্তিগত ক্ষোভের প্রকাশ। যদিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য লায়ন শেখ আজগর নস্করের মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সংগঠন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে কারণ দর্শানের নোটিস দিতে হবে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। সরাসরি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মৎস্যজীবী লীগ আজগর নস্করের দোকান নয়। তিনি চাইলেই কাউকে অব্যাহতি দিতে পারেন না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কাউকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা তার নেই। নস্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই বোঝেন না। তার রাজনীতির বিষয়ে জ্ঞান থাকলে এভাবে কাউকে অব্যাহতি দিতেন না।

আব্দুল আলিম আরও বলেন, আমাদের অব্যাহতি দেয়ার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্ত বয়কট করেছে মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক  লায়ন শেখ আজগর নস্কর।

মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ তালুকদার আমার সংবাদকে বলেন, অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি ওবায়দুল কাদের ভাই (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ও  গোলাপ ভাই (আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক) জানেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া কেউ অব্যাহতি দিতে পারে না।  

আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক রাজু আমার সংবাদকে বলেন, মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর দেশের বাইরে থাকায় একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেন আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার নির্দেশে সংগঠনে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেয়ায় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্করের মাইন্ডে লেগেছে। কারণ সংগঠনে তিনি একক ক্ষমতার মালিক। তিনি চান না সেই ক্ষমতার ভাগ অন্য কাউকে দিতে। তিনি ভাবেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত দিলে তার রাজনৈতিক অবস্থান নষ্ট হবে।

মৎস্যজীবী লীগের দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক রাজু আরও বলেন, লায়ন শেখ আজগর নস্কর কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন কি-না বা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ যেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা পালনের জন্য সংগঠন থেকে কাউকে অব্যাহতি দেয়ার এখতিয়ার তার নেই। এই অব্যাহতির গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না।
 

Link copied!