Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ভোটে আর প্রভাব চায় না ইসি

মো. মাসুম বিল্লাহ

অক্টোবর ৯, ২০২২, ১২:০৬ এএম


ভোটে আর প্রভাব চায় না ইসি

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড কমিশন পর্যবেক্ষণে রাখবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত অবস্থানে থাকবে। গতকাল শনিবার আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন দিকনির্দেশনা দেন সিইসি।

সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টার এ বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় বৈঠকে ছিলেন না আইজিপি।

তিনি বলেছেন, দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এমন কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ মনে করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার পর মাঠের খবর জানতে গতকাল ঢাকায় সব ডিসি ও এসপিকে বৈঠকে ডেকে এ বার্তা দেন সিইসি।

সভা শেষে সাংবাদিকদের সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সে সঙ্গে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছি দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এমন কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ মনে করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন।

সভায় লিখিত বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে; কিন্তু আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণ ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন। সরকার ও দলের মধ্যে প্রভেদ বিবেচনা রেখে দলনিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি।

দলীয় সরকারের অধীন মনে করে নিজেদের দলীয় কর্মী বা সমর্থক ভাববেন না বা এমনভাবে আচরণ করবেন না, যাতে সরকারি বা গণকর্মচারী হিসেবে আপনাদের দলনিরপেক্ষতা জনগণের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।

সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং ইসির প্রতি আস্থা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভাজন কাটাতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে জোর দেন সিইসি। সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সব দল, পক্ষ তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা যে কোনো সংকট-সংশয় নিরসনে সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে; সংশয় ও সংকট কেটে যাবে।

ইভিএম প্রসঙ্গ নিয়ে সভায় আলোচনা এলেও কর্মকর্তারা এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান সিইসি। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, ভোটারদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ভোটকেন্দ্র বাড়লেও পাশাপাশি ভোটকক্ষ বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে।

ভোটের এখনও এক বছর দুই মাসের বেশি সময় বাকি রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠেয় সব নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে নিজেদের ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন সিইসি।

সভায় তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাষায় বলছি— ভয়ভীতি, পক্ষপাতিত্ব, চাপ বা অন্য যে কোনো কারণে নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে না পারলে নির্বাচন হবে না; প্রহসন হবে। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে। এতে সংসদ নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ, আস্থা ও অংশগ্রহণ উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন সিইসি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশ যেন হয়রানি না করে, সে বিষয়েও পুলিশকে বলা হয়।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ বা বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের গুজব বা অপপ্রচার ছড়ানো হয় এবং অনেক মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে। আপনারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কোনো গুজবের সন্ধান পেলে বা এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে আপনারা দ্রুত গুজবকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

নির্বাচনের সময় অনেক প্রভাবশালী মহল বা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক/বর্তমান মন্ত্রী-এমপিসহ নানা মানুষ এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার বিষয়টিও তুলে ধরেন এ নির্বাচন কমিশনার। আহসান হাবিব বলেন, ‘কেউ কেউ নির্বাচনের সময় পেশিশক্তি, অর্থশক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। কালোটাকা ব্যবহারের কথাও শোনা যায়। আপনারা চোখ-কান খোলা রেখে এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন।

কমিশনারের বক্তব্যে হইচই : মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপনির্বাচন ও জেলা পরিষদের ভোট সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় ডিসি-এসপিদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন।বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, সভায় কর্মকর্তারা নির্বাচনে জ্বালানি খরচ, আচরণবিধি প্রতিপালনে সম্পৃক্তদের ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলেন।

বিষয়টি তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে— এমন ব্যাপক অভিযোগ এলেও কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে কথা না বলে উল্টো খরচ-ভাতা বাড়ানোর কথা আসছে। তখন কর্মকর্তাদের অনেকে হইচই করে প্রতিবাদ জানান। তখন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন তার বক্তব্য কর্মকর্তারা শুনতে চান কি না জানতে চান। তাতে কয়েকজন নেতিবাচক সাড়া দিলে বক্তব্য না বাড়িয়ে ডায়াস ছেড়ে মঞ্চের নির্ধারিত আসনে চলে যান তিনি।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ের সময় সিইসির সঙ্গে অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার এলেও উপস্থিত ছিলেন না আনিছুর রহমান।

ইসির নির্দেশনা মেনে চলব : বৈঠক শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অধীনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে থাকে। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করে। কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ ও সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে নির্বাচনগুলো হবে, তা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ডিসি-এসপিরা পরামর্শ দিয়েছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

তিনি জানান, গত নির্বাচনে ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ছিল, আগামী নির্বাচনে এ সংখ্যা বেড়ে ৪৩ হাজারের ওপরে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের যে সংখ্যা, তাতে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা যায় না। এজন্য আমরা চাচ্ছি ভোট ভেন্যুর সংখ্যা কমিয়ে বুথ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। এখন যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, কাজেই ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে যৌক্তিকসংখ্যক করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর হবে। কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ যেন না হয়, সে বিষয়ে ‘এনশিউর’ করা হবে বলে জানান সচিব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে হয়রানিমূলক মামলার সুযোগ নেই।

সচিব আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে রদবদল হয়, এটি রুটিন ওয়ার্ক। কিছুদিন আগে পদোন্নতির কারণে আমরা ৪০টি জেলায় নতুন এসপি নিয়োগ দিয়েছি। ওই এসপিদের আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছি।

Link copied!