Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ভোটে সিসিক্যামেরা আতঙ্ক

রফিকুল ইসলাম

অক্টোবর ১৭, ২০২২, ১২:৪৯ এএম


ভোটে সিসিক্যামেরা আতঙ্ক

জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ভোটডাকাতি ঠেকাতে সবগুলো কেন্দ্র আনা হয়েছে সিসিক্যামেরার আওতায়। যেন কোনোভাবেই নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না হয়।

এদিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিক্যামেরা থাকায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারা নির্বাচন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেই ভোট বাতিল করবে নির্বাচন কমিশন।    

ইসি সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে ৬০ হাজার ২১২ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আর নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দুই সহস্রাধিক প্রার্থী। সবগুলো কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।

ইতোমধ্যে গত শনিবার মধ্য রাতে শেষ হয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে ৪৮ ঘণ্টা মাঠে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়াও নির্বাচনি পরিবেশ রক্ষায় থাকবেন ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৭, সংরক্ষিত নারী পদে ১৯ ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১১৪ প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন।

নতুন কমিশনের অধীনে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিক্যামেরা। সিসিক্যামেরার মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তাদের দাবি— জেলা পরিষদ নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের ভোট কারচুপি, জাল ভোট প্রয়োগ, ক্ষমতার প্রভাবে কেন্দ্র দখল ও নির্বাচনি পরিবেশ নষ্ট না হয় সে জন্য সিসিক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সবগুলোর কেন্দ্রে বসানো সিসিক্যামেরা ভোটের আগের দিন থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি রেকর্ড করবে।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটাররা মোবাইলফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

অশোক কুমার দেবনাথ আরও বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মতোই ভোট হবে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিসিক্যামেরায় নির্বাচন সরাসরি মনিটর করবে কমিশন।’

জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ ছিল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তেও মাঠের আতঙ্ক কালো টাকা। অভিযোগ রয়েছে— টাকার মাধ্যমে ভোট  ক্রয়  করেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। এছাড়া বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হত্যার হুমকি, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া ও প্রার্থিতা প্রত্যারের অভিযোগ ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দাখিলের ঘটনাও ঘটেছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এ ছাড়া নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকে কৌশলে অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রী। তারা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে প্রচারণা ও সভা-সমাবেশও করেছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠেও ওই সব সংস্য নিজেদের প্রভাব বিস্তারে করছেন বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও বরাবরের মতো নীরব ভূমিকা পালন করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। কমিশন বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সরাসরি মনিটর করবে নির্বাচন কমিশন-ইসি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসিক্যামেরা থাকায় নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এতে নির্বাচনের কোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন। ফলে নির্বাচন ভোট বন্ধের আতঙ্ক থাকবে সারা দেশে। মূলত সিসিক্যামেরা দেখেই গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

যদিও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করার কারণে সৃষ্ট আলোচনা ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো চাপ অনুভব করছে না নির্বাচন কমিশন।

গতকাল জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনিটরিং সেল পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচন ভবনে এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না, আমরা আমাদের কাজ করছি।’

সিইসি আরও বলেন, ‘সিসি টিভির প্রচলনটা সামপ্রতিক। আমরা এর মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করতে পারি। এটি একটি ভালো দিক। আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাদের ভোটটা দিতে পারে। সে লক্ষ্যেই আমরা সিসি টিভির ব্যবহার করছি।’

অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চায় নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন তারা। কমিশনের যুগ্ম সচিব পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিসিটিভি ও ইভিএম মেশিন যথাযথভাবে সচল রাখার স্বার্থে এবং ভোটাররা যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা সদরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ভোটের প্রতিশ্রুতি না পেয়ে ফেসবুক লাইভে এসে ভোটারদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান জগদীশ বড়ুয়া। তিনি জেলা পরিষদ  নির্বাচনে পরাজিত হলে রোহিঙ্গাদের নেতা হবেন বলেও ভোটারদের হুঁশিয়ারি দেন। গত শনিবার দিনগত রাত ১২টা ৭ মিনিটে ‘মঙ্গল পার্টির’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ভিডিওটি ইতোমধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে তার ফেসবুক লাইভ নিয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভিডিওতে জগদীশ বড়ুয়া বলেন, ‘সব ভোটার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। নির্বাচনে হারলে রোহিঙ্গাদের নেতা হবো। তোদের মতো ভোটারের দরকার নেই। যদি আমি পরাজিত হই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাব ও রাষ্ট্রপতি হবো। এই যদি না হয় রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার মতো কেউ নেই, তাদের নেতা হয়ে কাজ করব। একই সাথে টাকায় বিক্রি হওয়া ভোটারদের ছেড়ে রোহিঙ্গাদের নেতা হয়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হই তাহলে আগামীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষণা দেবো। তাও মাগিরপুয়ার পৌরসভার মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আর দাঁড়াব না।’

Link copied!