অক্টোবর ১৯, ২০২২, ০১:৪৩ এএম
জলসবুজের ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ১৯টি পার্কের একটি মালিটোলা পার্ক। একসময় ছিল ট্রাকস্ট্যান্ড, সংস্কারের পর এটি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। বছর না ঘুরতেই মাদকসেবীদের আড্ডায় পুরোনো রূপে ফিরছে পার্কটি। কারণ সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে নেশাগ্রস্ত ও ভবঘুরেদের আড্ডা। পার্কের আশপাশে ঘোরাফেরা করে দেহব্যবসায়ীরা। নেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা, এতে ঘটছে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও। ফলে গত বছর পার্ক চালুর প্রথম কয়েক মাস নিয়মিত স্থানীয় বাসিন্দারা আসলেও বর্তমানে তারা আসছেন না। এছাড়াও পার্কের একপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন।
এদিকে নেশাগ্রস্তদের আড্ডার কথা স্বীকার করে পার্কটির ইজারাদার বলছেন, সুষ্ঠু পরিবেশ ও তদারকির অভাবে স্থানীয় লোকজন আসতে চান না। এতে ইজারা নেয়া পার্কটিতে হচ্ছে লোকসান। ডিএসসিসিকে বিষয়টি জানালেও তাদের কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ তার। সমন্বয় করে যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তবেই পার্কটি ব্যবহার উপযোগী হবে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসি ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পার্কে মাদকসেবীরা যাতে বসতে না পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গত শনি ও রোববার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মালিটোলা পার্কটি পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত। সদরঘাটমুখী এ সড়কের পাশের রাস্তার অর্ধেকজুড়ে এ পার্কটি। পার্কের পাশে রয়েছে একটি সিনেমা হল। সন্ধ্যার পর থেকে এ হলের সামনে ও পার্কের আশপাশে রাত পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে পতিতারা। এ সময় পার্কে মাদকসেবীরা আড্ডা জমায় গভীর রাত পর্যন্ত। পুলিশ আসলে মাদকসেবীরা সটকে পড়ে অন্য স্থানে।
এমনকি পার্কের ইজারাদারও এদের নানান সময় সরিয়ে দেয় বলে জানা যায়। পতিতাদের আনাগোনা-মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণে স্থানীয়রা এখন আর আসতে চান না। এমনকি পরিবারের শিশুদেরও এমন পরিবেশে আনা যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা।
আরও জানা যায়, ২৩ দশমিক ৭০ কাঠা আয়তনের পার্কটিতে রয়েছে ওয়াকওয়ে, গ্রিনজোন, পাবলিক প্লাজা, ওভারপাস, বেঞ্চ, এলইডি লাইটিং সিস্টেম, শিশুদের খেলার জায়গাসহ দর্শনার্থী আকর্ষণে সব ধরনের ব্যবস্থা। শুধু নেই নিরাপত্তার কোনো সঠিক ব্যবস্থা। তবে পার্কটিতে কফি শপ থাকার কথা থাকলেও ভাড়া দেয়া হয়েছে কাবাবের একটি দোকান। এ দোকান থেকে প্রতি মাসে নেয়া হচ্ছে ২০ হাজার টাকা ভাড়া।
এছাড়াও পার্কে থাকা পাবলিক টয়লেটের সামনে বসেছে চা-সিগারেটের দোকান। বসেছে ভাজাপোড়ার দোকানসহ আরও কয়েকটি দোকান। প্রতিমাসে এসব দোকান থেকে মাসিক টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রায়সাহেব এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, একসময় তো এ পার্কে আসা যেত না। গত বছর সংস্কারের পর পার্কটি চালু হলে কয়েকমাস সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতে পারতাম। পরিবারের সবাইকে নিয়ে এ পার্কে সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন সন্ধ্যার পর থেকে খারাপ লোকজনের আড্ডা বসে। তাই পরিবারের সদস্যরা আর আসতে চায় না। এখানে পতিতাদের আনাগোনা থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাই আর আসি না। আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা একই কথা জানালেন। সরেজমিনেও এর সত্যতা মিলে। এমনকি ইজারাদার-পুলিশ প্রশাসনও এ কথা স্বীকার করেছেন।
পার্কটির ইজারা নেয় ইসাক ফারদিন ট্রেডার্স। এর ইজারাদার মো. লাল মিয়া আমার সংবাদকে বলেন, মালিটোলা পার্কটি দক্ষিণ সিটির ৩৫নং ওয়ার্ডে ও দুই থানা কোতোয়ালি-বংশালে পড়েছে। বেশিরভাগ পড়েছে কোতোয়ালিতে। চার লাখ ৯৬ হাজার ও ট্যাক্সসহ প্রায় ছয় লাখ টাকায় পার্কটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছি। গত বছর উদ্বোধনের পর প্রথম কয়েকমাস স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়মিত পার্কে আসতেন, এখন আসেন না। কারণ সন্ধ্যার পর থেকেই রাত পর্যন্ত নেশাগ্রস্তরা আড্ডা জমায়। পার্কের আশপাশে পতিতাদের আনাগোনা থাকে। ফলে পার্কটি দৃষ্টিনন্দন হলেও সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে আসছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাশাপাশি দর্শনার্থী না আসায় আমরা লোকসানে আছি। লোকজন এলে এখানে যে ফাস্টফুড রয়েছে তাতে বেচাকেনাও হতো, কিন্তু হচ্ছে না। যাকেই দোকান ভাড়া দিচ্ছি সেই দোকান ছেড়ে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও মাদকসেবীদের বসতে দেই না। সরে গেলে তারা পুনরায় পার্কে আড্ডা জমায়। এমনকি কোনো পতিতাকেও আশপাশে ঘুরতে দেয়া হয় না। কিন্তু সবসময় তো আমরা তা করতে পারছি না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে (ডিএসসিসি) বিষয়টি জানালে তারা থানায় জানাতে বলে। থানায় জানালে তারা সহযোগিতা করে। তবে সবসময় তো আর পুলিশ সেখানে আসার সুযোগ হয় না। তাই সমন্বয়ের মাধ্যমে যদি সঠিক তদারকি করা যায় তাহলে পার্কে বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সিটি কর্পোরেশন যদি আমাদের সহায়তা না করে তাহলে তো পার্ক আর ইজারা নেয়া যাবে না। কারণ লোকসান দিয়ে পার্ক পরিচালনা করা যাবে না।
পার্কে থাকা কাবাব ঘরের এক কর্মচারী বলেন, প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে এ দোকানটি নিয়েছে তার মালিক হামিদ। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে দোকানটি। পার্কে নেশাগ্রস্তদের নিয়মিত বসে বলে পার্কে লোকজন কম আসে। এতে বেচা-বিক্রিও কম হয়। কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ডা. শারমিনা আলম আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের নিয়মিত পুলিশ টহল রয়েছে। তারপরও যেহেতু মাদকসেবীদের আড্ডা পার্কে বসে তাই আমরা পদক্ষেপ নেব। যখনই পার্কে কোনো মাদকসেবী পাওয়া যায় তখনই তাদের আটক করা হচ্ছে। পার্কের নিরাপত্তায় আমরা সচেষ্ট আছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন আমার সংবাদকে বলেন, পার্ক মাদকসেবীদের আড্ডাখানা হতে পারে না। এমন হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ইজারাদার ডিএসসিসিকে অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। যেহেতু বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারছি তাই পদক্ষেপ নেয়া হবে, যাতে স্থানীয়রাসহ সবাই পার্কে আসতে পারে।