অক্টোবর ২১, ২০২২, ১২:৪২ এএম
আগামী ডিসেম্বর মাস সামনে রেখে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে ডিসেম্বর মাস টার্গেট বিএনপির। তবে দলটির এমন আন্দোলনের ঘোষণা সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
দলটির শীর্ষ নেতাদের দাবি— ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আ.লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আ.লীগ কখনোই এমন হুঙ্কার ভয় পায় না। আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি পাঁয়তারা করছে বিএনপি। তারা পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আশার দিবাস্বপ্ন দেখছে।
সূত্রে, গত ৮ অক্টোবর পল্লবীর কালশীতে আয়োজিত জনসভায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান দাবি করেন ১০ ডিসেম্বরের পর শেখ হাসিনার কথায় আর দেশ চলবে না, দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। তার এমন বক্তব্যের পর মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন কথা বলছে দুই দলের শীর্ষ নেতারা।
একের অপরের দোষারোপ করে বক্তব্যে দিচ্ছেন তারা। ফলে ডিসেম্বর মাস ঘিরে বাড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক উত্তাপ। আ.লীগ সূত্রে, ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে ভালোভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করেন, আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি পাঁয়তারা করছে বিএনপি।
গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আশার অপরাজনীতি শুরু করেছে তারা। আন্দোলনের নামে ফের আগুন-সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির কর্মকাণ্ডের সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র ফেলার অংশ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপির সরকার পতনের হাঁকডাক এক দিনের নয়; দলটির নেতাদের স্বপ্ন যেকোনোভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু আমরা বলতে চাই, শুধু ডিসেম্বর নয় কোনো মাসেই কাজ হবে না। ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে হবে। এর বাইরে আর কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে দেশ বিরুদ্ধে ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। ষড়যন্ত্র ছাড়া বিএনপির কোনো কাজ নেই। এই ষড়যন্ত্র মোকবিলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় প্রস্তুত। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। কাজেই ডিসেম্বরের ভয় আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ অক্টোবর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের বৈঠক আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের করণীয় কি? বিএনপিসহ বিরোধী শিবিরের রাজনীতি কিভাবে মোকাবিলা করা হবে? ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কি করতে চায়? তা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচি মোকাবিলায় পাল্টা কর্মসূচি দিতে পারে আ.লীগ। এছাড়া ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বড় ধরনের সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে আ.লীগ। মূলত বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা যেন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারে। সে জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আ.লীগ।
আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এমন হুঙ্কারে আ.লীগ কখনোই ভয় পায় না। আগেও পাইনি।’
বিএনপির সমালোচনা করে নাছিম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামাতের অশুভ চরিত্র দেশের মানুষ দেখেছে। এখনো তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। এখনও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তারা তাদের আসল চরিত্র দেখাচ্ছে। তাদের আদর্শ হলো পাকিস্তানি আদর্শ। তারা সবসময় দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়। এখনও তারা তাদের বিষ দাঁত বের করে দেশকে ধ্বংস করতে চায়।
গতকাল আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ডিসেম্বর মাসে ১০ লাখ নিয়ে বসবেন কোথায়? ঢাকার রাজপথে? ডিসেম্বর বিজয়ের মাস, ডিসেম্বর আপনাদের নয় আমাদের মাস, মুক্তিযুদ্ধের মাস। ডিসেম্বরে বিজয়ের পতাকা হাতে লাখ লাখ লোক ঢাকার রাজপথে নামবে।
তিনি আরও বলেন, ফখরুল সাহেব ২০০১ সাল ভুলে যান। এখন ২০২২ সাল। ২০০১ সালে কত যে কুকর্ম করেছেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় এসে লুটপাট, রক্তপাত, দুঃশাসন, নারী নির্যাতন, গুম, খুন কি না করেছেন। সেই দুঃশাসন, সেই লুটপাটের হাওয়া ভবনে বাংলাদেশের মানুষ আর ফিরে যাবে না। সেই সামপ্রদায়িক নির্যাতনের দেশে বাংলাদেশের মানুষ আর যাবে না।’