অক্টোবর ২২, ২০২২, ১২:৫৬ এএম
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কার্যালয়ে ভবনের নকশা অনুমোদন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ভূমি একত্রীকরণের জন্য আবেদনের হিড়িক পড়েছে। মূলত নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেটভুক্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই তিনটি বিষয়ে গত এক মাসে রাজউকে তিন হাজার ২০১টি আবেদন জমা পড়ে।
তবে সাভার, ভুলতা ও পূর্বাচল এলাকার বেশির ভাগ আবেদন জমা পড়েছে। ভবন নির্মাণ অনুমোদনের জন্য আবেদন গত এক মাসে বিগত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজউকের আটটি অঞ্চলে গত এক মাসে নকশা অনুমোদন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও ভূমি একত্রীকরণের তিন হাজার ২০১টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে এক হাজার ৬৯০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন পড়েছে এক হাজার ৮২১টি। তার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৯৭টি। অঞ্চল-৪-এ (গুলশান, মহাখালী ও পূর্বাচল) সবচেয়ে বেশি ৫৯৪টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৮৪টি। আর সাভার ও মিরপুর এলাকায় (অঞ্চল-৩) ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য ৪৭৭টি আবেদন পড়েছে। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৮৮টি।
অঞ্চল-৬ অর্থাৎ মতিঝিল ও ভুলতা এলাকায় আবেদন জমা পড়েছে ২৮৬টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৩টি। উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী এলাকায় (অঞ্চল-২) আবেদন জমা পড়েছে ২১২টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৪টি। ১৫৩টি আবেদন পড়েছে নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা ও সোনারগাঁও এলাকায়। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৭টি। আশুলিয়া ও ধামসোনা ইউনিয়ন এলাকায় (অঞ্চল-১) আবেদন পড়েছে ২৫টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩টি।
আর নকশা অনুমোদনের জন্য রাজউকে গত এক মাসে আবেদন জমা পড়েছে এক হাজার ১৬৯টি। তার মধ্যে ৪৫৬টি নিষ্পত্তি হয়েছে। গাজীপুর, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ১৬৯টি আবেদনের মধ্যে ৬১টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে মতিঝিল ও ভুলতা এলাকায় সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
২৫৯টি আবেদনের মধ্যে ১২৬টি নিষ্পত্তি হয়েছে। সাভার ও মিরপুর এলাকায় ২২৪টি আবেদন জমা পড়েছে। আর গুলশান, মহাখালী ও পূর্বাচল এলাকায় ২০৫টি আবেদন জমা পড়েছে। তাছাড়া অনুমোদিত বেসরকারি হাউজিংয়ের ছাড়পত্র বা একত্রীকরণের নথি জমা পড়েছে ২১১টি। যার মধ্যে ১৩৭টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ কিছু এলাকা ২০১০ সালের ড্যাপে গ্রামীণ জনপদ দেখানো হয়েছিল। ওই সব এলাকা থেকে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের জন্য কেউ আসতো না। নতুন ড্যাপে ওসব এলাকায় চার থেকে ২০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।
আগে রাজউক এলাকায় প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হতো। ২০২০ সালের অক্টোবরে নতুন ড্যাপের খসড়া প্রকাশ পাওয়ার পর ওই বছর পাঁচ হাজার ৬১২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। যদিও ওই সময় করোনার কারণে সারা দেশে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ ছিল। তা সত্ত্বেও রাজউকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনের আবেদন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
তাছাড়া ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩২টি ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। যার বেশির ভাগই ছিল আবাসিক ভবন। চলতি বছর ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। বিগত বছরগুলোর আবেদনের গড় অনুযায়ী নতুন ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর ভবন নির্মাণে অনুমোদনের আবেদন বেশি সাড়া ফেলছে। ড্যাপ গেজেট হওয়ার পর গত এক মাসে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে দুই হাজার ৯৯০টি। অর্থাৎ আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা জানান, ড্যাপ গেজেট হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ড্যাপ অনুমোদন দিয়েছেন। এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কেউ যদি ব্যত্যয় ঘটায় এবং রাজউকের কোনো কর্মকর্তা যদি আবেদনকারীকে উল্টাপাল্টা বুঝায়, এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নতুন ড্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশের পরিকল্পনাগুলো যাচাই এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। পরামর্শ নেয়া হয়েছে যাতে দীর্ঘ মেয়াদে এই শহরের মান বাড়ে। উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য মাঠ, পার্ক, রাস্তাঘাট, ভবনের আয়তনসহ সার্বিক মান উন্নয়নই সরকারের লক্ষ্য। ওই লক্ষ্য অর্জনে জনঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
যেসব এলাকায় জনঘনত্ব বেশি, সেখানে যদি জনঘনত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে তার প্রভাব পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটসহ সবকিছুর ওপরই পড়বে। সরকারের সেটা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব। তবে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের হার গত বছরের চেয়ে ভালো এবং আশা করা যায় আগামীতে তা কয়েক গুণ বাড়বে।