অক্টোবর ২৮, ২০২২, ০৫:২০ এএম
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দেশে বন্ধ হতে চলেছে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা। এ খাতের ব্যবসায়ীরা গুটিয়ে নিচ্ছেন কর্মপরিধি। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাবে বেড়েছে সব ধরনের কাঁচাপণ্যের দাম।
পাশাপাশি ক্রমশ কমছে রপ্তানি আদেশ। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের আগ্রহ কমে গেছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এ খাতের টানা প্রবৃদ্ধিতে ছন্দপতন ঘটেছে। টানা সাত মাস বাড়তে থাকা ঋণপ্রবাহ সেপ্টেম্বরে দশমিক ১৪ পয়েন্ট কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে।গত আগস্টে ছিল ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদহার বৃদ্ধির পরও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। মূলত যুদ্ধের ধাক্কা সামাল দেয়া গেলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট বেসরকারি খাতে বড় প্রভাব ফেলেছে; যা ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যদিও কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশের আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণও বেড়ে যায়।
এছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অতিরিক্ত মূল্য খরচ করতে হওয়ায় ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে গিয়েছিল। তবে সেপ্টেম্বরে আমদানির পরিমাণ কমেছে। লোডশেডিং ও জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। তাই বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি ঋণের খুব একটা দরকার পড়ে না। সেজন্য আগের মাসের তুলনায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক খাত থেকে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। আগের মাস আগস্টে গত বছরের আগস্টের চেয়ে বেশি নিয়েছিলেন ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
আর চলতি বছরের আগস্টে ছিল ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে। জুন মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। জুলাইয়ে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে ওঠে। আগস্টে বেড়ে ১৪.০৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আর সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শেষ হয়। তবে গত আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবৃদ্ধি ছিল, তা প্রায় নতুন মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি।
তবে সেপ্টেম্বরে সে প্রবৃদ্ধি থেকে আরও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। আগের মাস আগস্টের তুলনায় যা ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ শতাংশ কম। সেপ্টেম্বরে আমদানি এলসি নিষ্পত্তিও আগের মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ কমে ৬০০ কোটি ডলারে নেমেছে। আগের মাস আগস্টে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৩৩ কোটি ডলার।
এছাড়া গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। অর্থাৎ সংকট ঘনীভূত হওয়ায় বেসরকারি খাতে কাঁচাপণ্য আমদানি কমে গেছে। তাই কমছে ঋণের চাহিদাও।