অক্টোবর ৩০, ২০২২, ১২:৪৮ এএম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি আগুন-সন্ত্রাস, হত্যা ও খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তা কঠোরভাবে দমন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশকে গিলে খাবে। দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করবে। দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাবে। এজন্য তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় দুপুর সোয়া ২টায় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
সম্মেলন শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকা জেলার অন্তর্গত দোহার, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ উপজেলাসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। তারা লাল-সবুজ, হলুদ রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিধান এবং ঢাকঢোল-তবলা ও ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত হন। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সম্মেলনস্থল। মুহূর্তেই জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলন স্থল ও আশপাশ এলাকা।
ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় ও দলীয় সংগীত। গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। নেতাকর্মীদের সুবিধার্থে বাণিজ্য মেলার মাঠে বসানো হয় ২২ হাজার চেয়ার। নৌকার আদলে বড় আকৃতির মঞ্চে বসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় রিজার্ভই ছিল না। তারা রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছিল। বিএনপি এ দেশের অর্থনীতি গিলে ফেলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ গিলে ফেলেছে। এবার যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে দেশ গিলে খাবে। তাই বিএনপি থেকে সাবধান। বড় লোকের বাসার সামনে লেখা থাকে, কুকুর হইতে সাবধান। আমরা বলছি, বিএনপি হইতে সাবধান। রংপুরে বিএনপির সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জানেন রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে।
সেখানে তিন দিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, বিএনপির সম্মেলনে কয়জন লোক হয়েছে তা আমরা দেখেছি। আজকে শুধু ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে কত লোকজন হয়েছে তা আপনারা দেখে যান। এখানে আমাদের নেত্রী নেই। তারপরও কত লোক হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। গত ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নামও শেখ হাসিনা।
বিএনপির নির্বাচনে আসা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। যাবেন, যাবেন। গাধা পানি ঘোলা করে খায়। সময় আসলেই দেখা যাবে বিএনপি নির্বাচনে যায় কি-না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বিএনপি এখন বড় বড় কথা বলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নাকি তারা নির্বাচনে আসবে না। আমরা বলে দিতে চাই, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তারা নির্বাচনে আসলে আসবে, না আসলে নাই।
বিগত এক-এগারো সরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ওই সময় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে জেলে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তা সফল হয়নি। আগামীতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর পেছনে থেকে জেলার পাঁচটি আসনে এমপি উপহার দেবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে চায়। আমরা বেঁচে থাকতে সেটি বিএনপিকে করতে দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিকবারে হত্যা করেছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। সেই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন জিয়াউর রহমান। আজ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলকে হত্যার দায়ে তার ফাঁসি হতো। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। কাউকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে দেয়া হবে না। জনগণ বিশৃঙ্খলা পছন্দ করে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাবো আমরা। বিএনপি হলো খুনি দল। তারা ১৫ আগস্টের খুনি, ২১ আগস্টের খুনি। এই অপশক্তি রুখে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, বিএনপির নেতারা আন্দোলনের নামে দেশে আগুন-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম মানেই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, পুলিশের ওপর আক্রমণ করা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ফের আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতিতে ফিরতে চায়।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের সংবিধানকে পদদলিত করেছে বিএনপি। তারা অসামপ্রদায়িক শক্তি। তাদের কোনো ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে মেনে নেয়া হবে না। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে বলে এ সময় দাবি করেন বাহাউদ্দীন নাছিম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতা দখল করে নেবে বলে শুনেছি। তারা নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে। বিএনপি এটি কীভাবে করতে পারে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে চলে। এ সমাবেশে লাখো জনতার উপস্থিতি বলে দিচ্ছে আমরা আবারও সরকার গঠন করব। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকার জয় নিশ্চিত করতে হবে, ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যারা বাংলাদেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল, তাদের মোকাবিলা করতে যাচ্ছি আমরা। দেশবিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন থেকেই খেলা শুরু হবে। ঢাকা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বিএনপিকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
সভাপতি বেনজীর, সাধারণ সম্পাদক তরুণ
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা শাখার নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান বেনজির আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক হন পনিরুজ্জামান তরুণ। এতে টানা তৃতীয়বারের মতো ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন বেনজির আহমদ। আর নতুন করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান পনিরুজ্জামান তরুণ। তরুণ এর আগে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।