Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫,

মানসম্পন্ন বই ছাপানোই চ্যালেঞ্জ

বেলাল হোসেন

অক্টোবর ৩০, ২০২২, ০১:১৩ এএম


মানসম্পন্ন বই ছাপানোই চ্যালেঞ্জ

নতুন পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে সংশয় যেন এখনো কাটছে না। কাগজের দাম নিয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। টাকা দিয়েও মিলছে না ছাপানোর কাগজ। মুদ্রণশিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, সরকার যদি আমাদের বিষয়ে না ভাবেন তাহলে আগামী ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি বই দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

মানসম্পন্ন বই বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়া অনেক কষ্টকর হয়ে পড়বে। বর্তমানে মুদ্রণশিল্পের সাথে জড়িত সবার কাছে বিষয়টা বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে প্রায় ১০ কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় পৌঁছে যায়। এবার বই ছাপানো নিয়ে এখনো টালমাটাল অবস্থায় মালিকরা।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ ভালো অবস্থানে আছে। তবে প্রাথমিকে একটু দেরি হচ্ছে, এটার কাজও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠে ৬০ লাখ বই চলে গেছে। ছাপানোর টার্গেটের ৫০ শতাংশ বই হাতে এলে পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবে কোনো সমস্যা হবে না।

এদিকে কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চেয়েছেন প্রকাশকদের কাছে। গতকাল রাজধানীতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় সমিতির পক্ষে  প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব সংকটের মুখে। তাড়াতাড়ি সুসংবাদও পাব না। টিকে থাকতে হবে। কদিন আগে কাগজ বিক্রেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা কথা দিয়েছেন ১ জানুয়ারিতে বই দিতে পারব। এরপরও কথার খেলাপ হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।  সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই। বই আমার লাগবেই এবং ১ তারিখেই লাগবে।’

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনও ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপাতে মোট এক লাখ মেট্রিক টন কাগজ প্রয়োজন হয়। কাগজ মিল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাগজের কাঁচামাল সংকটের কারণে মিলগুলো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না।

এনসিটিবি সূত্রে আরও জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ছাপা চলছে। আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবইয়ের ম্যাটার দেয়া হয়েছে। এগুলোর পেস্টিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আর প্রাথমিকের বই ছাপানোয় একটু পিছিয়ে আছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহিদ সেরনিয়াবাত আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমানে খুব খারাপ অবস্থা। টেন্ডারকালীন সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, একজন মুদ্রণ ব্যবসায়ী পাঁচ টাকা রেটে কাজ পেয়ে এখন যদি তাকে সাত টাকা রেটে কাজ করতে হয় তাহলে কি অবস্থা সেটা আপনারাই বলেন কি দাঁড়ায়।

কাগজের চরম সংকট উল্লেখ করে শহিদ বলেন, প্রিন্টের মালিকরা পাঁচ থেকে সাত কোটি করে টাকা দিয়ে রাখছেন তবুও কাগজ মিলছে না। প্রতিনিয়ত কাগজের দাম বাড়ছে। কাগজ মিলগুলো একটা অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, এছাড়া ডলার ক্রাইসিসের কারণে আমরা যে বিদেশ থেকে কাগজ ইমপোর্ট করব তারও কোনো সুযোগ নেই। ফলে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম দিনে বাচ্চাদের হাতে বই দেয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, গতবারের তুলনায় এ বছর আমরা ভালো অবস্থানে আছি।

তিনি বলেন, গত ২৬ অক্টোবর প্রাধনমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে মিটিং করেছি। এবার আমার দুই কোটি ১৬ লাখ বইয়ের প্রিন্ট হাতে পেয়েছি। ঠিক এ সময়ে গতবার এক কোটি ২১ লাখ বই ছাপানো হয়।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৬০ লাখ বই বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গতবারের তুলনায় মাধ্যমিকের অবস্থা খুবই ভালো। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মুদ্রণশিল্পের সাথে যারা জড়িত তারা সবসময় জুজুর ভয় দেখায়। আমাদের বিপাকে ফেলতে চায়।

তিনি বলেন, এ বছর কাগজের সংকট আছে। কাগজের মিলগুলো কাগজ তৈরির যে পাল্প সেটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ বছর পাল্প আমদানি কম ছিল। ডলারের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় পেপার মিলগুলো এলসি খুলেও পাল্প আনতে পারেনি। মূলত এর কারণে কাগজের সংকট।

তিনি বলেন, মালিকদের হাতে ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ। আর তারা ৩০ হাজার টন বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারে— এমনটা ধারণা করা হয়েছে। আর যদি পেপার মিলগুলো প্রতিদিন হাজার টন করে মোট ৫০ হাজার টন কাগজ দেয় তাহলে আমাদের টার্গেট অনুযায়ী বই ছাপানোর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রতিবছরই মুদ্রণশিল্পগুলো এই রকম সময়ে একটা সমস্যার কথা বলে। এটা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা পরিহার করা উচিত বলে মনে করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী পেপার মিল মালিকদের কাগজের দাম না বাড়ানোর বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে এটা নিয়ে বারবার সমস্যা দেখা দিলে আগামীবার থেকে কাগজের আমাদানির ব্যাপার নিয়ে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব। প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক ছাপা নিয়ে যে টানাপড়েন তা কাটিয়ে উঠেছে। 
গত ২২ অক্টোবর চুক্তির শেষ দিন ছিল, সেদিন সবার সাথে চুক্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরুর পথে। তবে মাধ্যমিকে কোনো সমস্যা নেই।

ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ৫০ শতাংশ বই হাতে এলেই আমরা ১ জানুয়ারি বই উৎসব করতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না।

Link copied!