নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১, ২০২২, ১২:২০ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১, ২০২২, ১২:২০ এএম
দেশে এবার আমনের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের মোট ৩১টি জেলার আমন ধানের আবাদি জমি নানা মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছে। ওইসব জেলায় আমন আবাদে ব্যবহূত মোট ৮০ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। তার বাইরেও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমির ধানে চিটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে এবার আমন মৌসুমে চালের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার অনাবৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে আমন আবাদ শুরু করা যায়নি। ফলে কিছু জেলায় সবে ধান পাকতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতে অনেক জমির ধান হেলে পড়েছে। কিছু অঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ধানি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তার বাইরেও অনেক ফসল দুর্যোগের প্রভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বয়ে গেলেও সারা দেশেই তার প্রভাব পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবজনিত দুর্যোগে মোটামুটি দেশের সব জেলায়ই কম-বেশি আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি পঞ্জিকা বর্ষে মোট ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে এবার সময়মতো মৌসুমের আবাদ শুরু করা যায়নি। তাতে আবাদে লক্ষ্য পূরণে সংশয় ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসে আবাদি জমির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। এবার মোট ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে আমন মৌসুমের ধান আবাদ করা হয়েছে। সেখান থেকে এক কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ৩৮০ হেক্টরের ফসল কাটা হয়েছে, যা মোট আবাদকৃত জমির ১ শতাংশ।
সূত্র আরও জানায়, উপকূলে খুলনা অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় এবার মোট দুই লাখ ৯৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। তার মধ্যে ২৩ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে খুলনা জেলার ধানি জমি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। জেলাটিতে মোট ৯৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১৭ হাজার ৯৪২ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাটে আক্রান্ত হয়েছে ২১৩ হেক্টর জমির আমন ধান। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে এবার মোট পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। শুধু আমন ধানেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকদের এবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা। ওই অঞ্চলের সাত হাজার ২০৮ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নোয়াখালীতে আট হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজার জেলায় ৭৯৮ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরে ১০০ ও ফেনী জেলায় ১১১ হেক্টর জমির আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে। তাছাড়া কুমিল্লা অঞ্চলের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট এক লাখ ৯৭ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আট হাজার ২৯২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। যা মোট জমির প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ওই অঞ্চলে চাঁদপুরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
জেলার আমন আবাদি মোট ২৭ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমির মধ্যে সাত হাজার ৯২৫ হেক্টরই আক্রান্ত হয়েছে। আর বরিশাল অঞ্চলের ছয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলায় ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। সিত্রাংয়ের প্রভাবসৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৯২০ হেক্টর জমি। তার মধ্যে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলায় তিন হাজার ৫৬০ হেক্টর ও পটুয়াখালীতে এক হাজার ১৬০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ফরিদপুর অঞ্চলেও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এবার ফরিদপুর জেলায় ৭৪ হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে চার হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। গোপালগঞ্জের ১৩ হাজার ৪১০ হেক্টর আমন ধানের জমির তিন হাজার ৩৫২ হেক্টরই আক্রান্ত হয়েছে। আর ঢাকা অঞ্চলের আট জেলায় তিন হাজার ৮৪০ হেক্টর, যশোর অঞ্চলের ছয় জেলায় ৭৫৬ ও সিলেট অঞ্চলের চার জেলায় ২০০ হেক্টর ধানের জমি আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ দেশের মোট ৩১ জেলায় আমন ফসল আক্রান্ত হয়েছে। তবে কী পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে মূলত বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম জানান, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ কিছু জেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আশা করা যায়, আমন উৎপাদনে এ ক্ষতি তেমন প্রভাব ফেলবে না। তাছাড়া যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, ঝড়ের আগেই সেখানে পানি উঠে গেছে। ফলে যত ঝড়ই হোক, ধান গাছ হেলে পড়েনি। এখন পানি নেমে যাচ্ছে। সাধারণত বাতাসে ক্ষতি বেশি হয়। তবে সেটা হয়নি। আবার উপকূলীয় এলাকাগুলোয় এবার দেরিতে ধান আবাদ করায় এখনো গাছগুলো ছোট। কিছু এলাকায় ধান হেলে পড়েছে। তার তথ্য নেয়া হচ্ছে। তাতে সামান্য কিছু ক্ষতি হতে পারে। তবে সার্বিক উৎপাদনে এর প্রভাব পড়বে না। উল্টো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির কারণে তুলনামূলক ফলন ভালো পাওয়া যাবে।