নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১১, ২০২২, ০১:১৪ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১১, ২০২২, ০১:১৪ এএম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা হত্যামামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সাথে অপরাধীদের ধরতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। তবে মামলার এজাহারে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বুশরার ইন্ধনে পরশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া পরশ নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বুশরার সাথে ছিল।
নূর উদ্দিন রানা এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ নভেম্বর ফারদিন নূর পরশ ডেমরার বাসা থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বের হয়। সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষা দিয়ে ৫ নভেম্বর দুপুরে বাসায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু গত শনিবার ফারদিন পরীক্ষা দিতে না যাওয়ায় তার বন্ধু ও শিক্ষকরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তার ফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। গত শনিবার সকাল থেকেই তার ফোন বন্ধ ছিল। পরে আমরা বিষয়টি শনিবার বিকেল ৫টার দিকে জানতে পারি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ফারদিনের বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাইনি। পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি গত শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়ে ফারদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আমাতুল্লাহ বুশরার সাথে ছিল। প্রথমত তারা দুজন সিটি কলেজ এলাকায় মিলিত হয়েছে এবং পরে নীলক্ষেত, ধানমন্ডি এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে। পরে বিকেলে ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে তারা খাবার খায়।
তিনি আরও বলেন, খাবার খেয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়েছে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিকশায় করে তারা রামপুরা টিভি ভবন সংলগ্ন এলাকায় আসে।
ফারদিনের বাবা এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর ৭ নভেম্বর বিকেলে আমার ছেলের লাশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নৌপুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করে। এ খবর পেয়ে আমি আত্মীয়-স্বজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার ছেলে ফারদিন নূর পরশের লাশ শনাক্ত করি।
আমি ধারণা করছি, আমাতুল্লাহ বুশরার ইন্ধনে ৪-৭ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে রামপুরা এলাকায় অথবা অন্য কোনো স্থানে পরিকল্পিতভাবে ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। আমার পুত্র ফারদিন নূর পরশের নিখোঁজ ও মৃত্যুতে আমাতুল্লাহ বুশরার ইন্ধন রয়েছে। এ অবস্থায় ফারদিন নূর পরশ হত্যার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করতে এই এজাহার দাখিল করছি।
গতকাল রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার রাতে ফারদিনের বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি মামলায় হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগ আনেন। মামলায় একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি বুশরা, আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা পরশকে হত্যা করার মোটিভ জানতে পারিনি। এ ছাড়া বুশরার সঙ্গে পরশের কি ধরনের সম্পর্ক ছিল সেটিও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা প্রয়োজন।
এদিকে, গতকাল বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক, সামাজিক কোনো ঝামেলা ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাই চলছে। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে আমরা এখনই বলতে পারছি না, একটু সময় লাগবে। আমাদের দুই-তিনটি টিম কাজ করছে প্রতিদিন। আরও পারিপার্শ্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আয়াতুল্লাহ বুশরা নামে এক শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ফারদিনের বান্ধবী। তাকে এর আগেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মামলা হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি। তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর আগে গত শনিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন।
ওই দিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ থেকে পুলিশের ধারণা— ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা নূর উদ্দিন গত বুধবার মধ্যরাতে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে সেই মামলার সূত্র ধরে বুশরাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত বুশরার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।