Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪,

অক্সিজেন স্বল্পতায় বেশি মৃত্যু

মাহমুদুল হাসান

নভেম্বর ১২, ২০২২, ১২:৫০ এএম


অক্সিজেন স্বল্পতায় বেশি মৃত্যু

শীতের শুরুতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। নিউমোনিয়া শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভীতি তৈরি করে। কারণ শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর দেশে গড়ে দুই লক্ষাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার। পরিবেশ ও বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

বৈশ্বিক হিসাবে, নিউমোনিয়া আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশের অবস্থান। বর্তমানে এই রোগটিতে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ১ শতাংশ মৃত্যু হয়। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই মৃত্যুহার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

আর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্র অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সি শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জনের নিচে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া নিয়ন্ত্রণও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এখনো নিউমোনিয়ায় মৃত শিশুর ৪২ শতাংশ রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা বা হাইপক্সেমিয়ায় মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। অথচ  দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর বড় কারণ এই রোগ। আগের চেয়ে সচেতনতা বেড়েছে। একই সাথে মৃত্যু হারও কমেছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বেড়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছরের মধ্যে আগের তুলনায় ৫১ শতাংশ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ার বড় কারণ বায়ুদূষণ কমাতে হবে। একই সাথে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর যথাযথ চিকিৎসার সুযোগও তৈরি করতে হবে।

আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান জানান, সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাত কোটি ৩০ লাখ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে শিশুই তিন কোটি ২০ লাখ। হাইপক্সেমিয়ায় (রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা রোগে) আক্রান্ত যেকোনো রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন।

বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিস্থিতিতে হাইপক্সেমিয়া ঘটতে পারে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত নবজাতক থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, সেপসিস ও যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), হূদরোগ ও হাঁপানিসহ আরও অনেক।

তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকা শহরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর বেশি হওয়ার কারণও হাইপক্সেমিয়া। এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সাথে মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন উদ্ভাবনের ওপরও জোর দেয়া জরুরি।

দেশের সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থার চিত্র : বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসেলিটি সার্ভে-২০১৭-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে তিনটি অক্সিজেন উৎসের যেকোনো একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিদ্যমান ছিল। মাত্র ২১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে ফ্লো-মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। মাত্র ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল।

২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআরবির নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ শতাংশ হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ শতাংশের ক্ষেত্রে আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস এনালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, এসিড-ক্ষারের ব্যালেন্স ইত্যাদি পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে। অক্সিজেন সিকিউরিটি দেয়ার জন্য অক্সিজেনের অন্যান্য উৎসের ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ হাসপাতালের কাছে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর যন্ত্র, ২ শতাংশের বন্ধ স্টোরেজ ট্যাংকে তরল অক্সিজেন ছিল এবং ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে ওই হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছিল।

এছাড়াও সেন্ট্রাল ও সার সেন্ট্রাল পাইপিং শুধু ১৭ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিদ্যমান ছিল এবং ২০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে পরিদর্শনের দিনে ফেল-স্প্লিটার উপস্থিত ছিল। এক-চতুর্থাংশ জেলা হাসপাতালে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনসহ লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি দেয়ার ব্যবস্থা ছিল, যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ জেলা হাসপাতাল নন-ইনভেসিভ ও ইনভেসিভ দু’ধরনের ভেন্টিলেশনের সাথেই বেসিক অক্সিজেন থেরাপি দিতে পারে।

কর্মসূচি : এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১২ নভেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২১। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘নিউমোনিয়া সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে।’ দিবসটি উপলক্ষে নিউমোনিয়া নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করবে।

Link copied!