নভেম্বর ১৬, ২০২২, ০১:১৬ এএম
সেই ১৯৩০ সাল; উরুগুয়েতে তখন জন্ম নিয়েছিল ফিফা বিশ্বকাপের। এবার ৯২ বছর বয়সে পা রাখতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আর মাত্র চারদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আগামী ২০ নভেম্বর স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ২০২২ বিশ্বকাপের। প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় এই আসর। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ৩২টি দল।
তবে অংশ নেয়ার আগে প্রতিটি দলকে বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে হয়। সারা বিশ্বের ফুটবলকে যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করে সেই প্রতিষ্ঠানটিই হলো ফিফা। তবে এই ফিফা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কত সালে! সেই ইতিহাস জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সেই ১৯০৪ সালে। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিফা।
এরপর ১৯০৬ সালে ভিন্ন একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সুইজারল্যান্ডে। ১৯০৯ সালে স্যার থমাস লিপটন তুরিনে ‘স্যার থমাস লিপটন ট্রফি’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এই প্রতিযোগিতায় কোনো দেশ অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিটি ক্লাবই ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। যার জন্য এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে প্রথম বিশ্বকাপ বলে থাকেন।
এতে ইতালি, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা পেশাদার দল অংশ নিয়েছিল। ১৯১৪ সাল, অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ফুটবলকে অপেশাদার বিশ্ব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয় ফিফা। এই প্রতিযোগিতা পরিচালনাও করে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি।
১৯২০ সালের গ্রীষ্ম অলিম্পিকে বিশ্বের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মিসরসহ ১৩টি ইউরোপিয়ান দল এতে অংশ নেয়। এই প্রতিযোগিতায় বেলজিয়াম স্বর্ণ জিতেছিল। এরপর ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের অলিম্পিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতে উরুগুয়ে। ১৯২৮ সালে অলিম্পিকের বাইরে আলাদাভাবে নিজস্ব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষে পদার্পণ করে উরুগুয়ে।
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। প্রথম সেই বিশ্বকাপের আয়োজন করে উরুগুয়ে। সেই আসরে ফাইনালে উঠে উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে উরুগুয়ে। ৯২ বছর আগে এস্টাডিও সেন্টেনারিও স্টেডিয়ামে সেদিন প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাস করেছিল স্বাগতিক উরুগুয়ে। সেই থেকে প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের আসর।
১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আয়োজন করে ইতালি। চেকোস্লোভাকিয়াকে হারিয়ে সেই আসরে বিশ্বকাপ জেতে ইতালি। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পাঁচ পার বিশ্বকাপ জিতেছে লাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। মোট সাতবার ফাইনাল খেলেছে এই দলটি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ গ্রহণ করে।
এরপর ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ এবং ২০০২ সালে বিশ্বমঞ্চে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপে সফলতম দল জার্মানি। জার্মানি চারবার ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে।
তবে ব্রাজিলের চেয়ে একবার বেশি মোট আটবার ফাইনাল খেলেছে জার্মানি। এরচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলার রেকর্ড অন্য কোনো দেশের নেই। জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১৪, ১৯৯০, ১৯৭৪ ও ১৯৫৪ বিশ্বকাপে। আর রানার্সআপ হয়েছে ২০০২, ১৯৮৬, ১৯৮২ ও ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে। ফুটবল বিশ্বকাপের তৃতীয় সফলতম দল ইতালি।
জার্মানির মতো ইতালিও চারবার ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে। ইতালি মোট ছয়বার ফাইনাল খেলেছে। এর মধ্যে ২০০৬, ১৯৮২, ১৯৩৮ এবং ১৯৩৪ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালি। ১৯৯৪ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে তারা রানার্সআপ হয়েছিল। তবে ইতালি দুইবারই ফাইনাল হেরেছে ব্রাজিলের কাছে।
এরপরের নামটা আসবে আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনা-মেসির দল ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে মোট পাঁচবার। এর মধ্যে তিনবারই রানার্সআপ হয়েছে। সবশেষ ২০১৪ সালের ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরেছে মেসির আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে এই দুইবারই ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয় আলবিসেলেস্তারা। লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ উরুগুয়েও দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছে। ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। ইংল্যান্ড ও স্পেন মাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে মাত্র একবার করে।
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড এবং ২০১০ চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। তবে এর মধ্যে এমন কিছু দল আছে যারা একাধিকবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি একবারও। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডসের নামটাই আসবে সবার আগে। ডাচরা ফাইনাল খেলেছে তিনবার। কিন্তু একবারও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি দুটি করে ফাইনাল খেলেছে। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ তাদেরও পাওয়া হয়নি।
এদিকে বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় রয়েছে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। তার সঙ্গে আছে পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নামও। সম্ভবত এটিই এই দুই তারকা খেলোয়াড়ের শেষ বিশ্বকাপ। তবে দুজনের একজনও এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি। তাই এবার মরিয়া হয়ে আছে এই দুই তারকা।