মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
নভেম্বর ১৭, ২০২২, ০২:৩৮ এএম
মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
নভেম্বর ১৭, ২০২২, ০২:৩৮ এএম
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দুদিন আগে থেকে পার্শ্ববর্তী জেলার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার কয়েকশ নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরের নগরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, সমাবেশস্থলে ক্যাম্প স্থাপন করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা দিনযাপন করছেন। আলাপকালে একাধিক নেতাকর্মী আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, পুলিশের ধরপাকড় ও বিভিন্ন হয়রানি এড়াতে তারা সমাবেশস্থলে আশ্রয় নিয়েছেন।
তারা জানান, বিএনপির সমাবেশের দিন পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তাই ঝামেলা এড়াতে দুদিন আগেই তারা সিলেটে এসে পৌঁছেছেন। অবশ্য সিলেটে এখনো পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেই বলে জানিয়েছেন জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। আগামী শনিবার নগরের চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এ গণসমাবেশ হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে যোগ দেবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধরপাকড় ও বিভিন্ন হয়রানি এড়াতে কৌশল অবলম্বন করছেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কৌশলের অংশ হিসেবে দূর-দূরান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা হোটেল-মোটেলে উঠবেন না বলে জানা যায়। বিকল্প হিসেবে তারা সমাবেশস্থলে ক্যাম্প স্থাপন করে ও কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে থাকবেন।
বিএনপির একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোটেল-মোটেলগুলোয় উঠলে নাম-পরিচয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে হয়। আবার বিভিন্ন ধরনের হয়রানিরও আশঙ্কা থাকে। তাই স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশস্থলে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং সিলেটের বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে সিলেটের বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিলেট হোটেল-মোটেল-রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী বলেন, হোটেলগুলো বলতে গেলে শুক্রবার ও শনিবার ফাঁকা। এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো বুকিং নেই।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী শনিবার সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ করবেন তারা। চার লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য বিভাগের মতো সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলে আগে আসা নেতাকর্মীদের থাকার জন্য নগরের প্রায় সবগুলো কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেয়া হয়েছে। এছাড়া দূর-দূান্ত থেকে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য নগরীর ফাঁকা মাঠ এবং নেতাদের বাসায় বাসায় দুদিনের থাকা-খাওয়ার বন্দবস্ত করা হয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেটের সমাবেশে অন্তত চার লাখ মানুষের সমাগম হবে। যেভাবে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে জমায়েত আরও বেশিও হতে পারে। সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হতে পারে। এই শঙ্কা থেকে নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে সমাবেশস্থলে ক্যাম্প তৈরি করছেন। সেখানে তারা সমাবেশের আগে থেকেই অবস্থান করবেন।
এদিকে বিএনপির ‘নিখোঁজ’ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর গাড়িতে হামলার বিষয়টি ‘ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ’ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পুরো সিলেটে যখন আগামী ১৯ নভেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চলছে, সিলেটবাসী যখন সমাবেশে একাত্মতা পোষণ করেছে; তখন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর গাড়িতে হামলার ঘটনা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। বিবৃতিতে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশে উপস্থিত হয়ে সব ধরনের নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানানো হয়। অবশ্য সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম গতকাল দুপুরে আমার সংবাদকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সিলেটে ধর্মঘটের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বিএনপির গণসমাবেশের সময়ও গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচলের পক্ষে।’