Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বিশ্বসেরা পাঁচ কোচের লড়াই

আহমেদ হূদয়

আহমেদ হূদয়

নভেম্বর ১৯, ২০২২, ০১:৪৪ এএম


বিশ্বসেরা পাঁচ কোচের লড়াই

লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা নেইমার— এরা সবাই তারকা ফুটবলার। পুরো বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা হয়তো তাদের এক নামেই চেনেন। শুধু তা-ই নয়, ‘তারকা খেলোয়াড়’খ্যাত বিশ্বে আরও অনেক ফুটবলারই আছেন। কিন্তু এসব তারকা আসলে উঠে আসেন কোথা থেকে! এদের পেছনে কাজই বা করেন কারা! কোচ; হ্যাঁ, এসব তারকা খেলোয়াড় গড়ার কারিগর কোচ।

কারণ, ফুটবলে কোচের ভূমিকা একেবারেই আলাদা। ১১ জন খেলোয়াড় মাঠে খেলেন ঠিকই; কিন্তু ডাগআউটে বসে মাস্টারপ্ল্যান করেন কোচরাই। কোন খেলোয়াড় কীভাবে খেলবে কিংবা খেলার মাঠে কার ভূমিকা কেমন, তাও ঠিক করে দেন কোচরা। তবে কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে আলোচনায় আছেন পাঁচ দেশের পাঁচ কোচ। ব্রাজিলের তিতে; টানা দুই বিশ্বকাপে তিনি ব্রাজিলের দায়িত্বে আছেন।

গতবারের ব্যর্থতা ভুলে এবার ভালো কিছু করার আশায় কাতারে পাড়ি জমিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই কোচ। তার প্রধান কৌশল বল পায়ে রেখে ঘন ঘন আক্রমণে ওঠা। ব্রাজিলের দুই পাশের রাইটব্যাক এবং লেফটব্যাককে সব সময়ই দেখা যায় আক্রমণে উঠতে। আবার চট করেই নিচে নেমে আসতে পারেন ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়রা।

কঠিন সময়েও খেই না হারিয়ে দলকে চেপে ধরতে পারদর্শী ব্রাজিলিয়ানরা। ২০১০-১১ মৌসুমে তিতে কোরিন্থিয়ান্সের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যেখানে তিনি ম্যানেজার হিসেবে প্রায় চার মৌসুম অতিবাহিত করেছেন। এক মৌসুম বিরতির পর তিনি দ্বিতীয় দফায় কোরিন্থিয়ান্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় দফায় কোরিন্থিয়ান্সের হয়ে ম্যানেজার হিসেবে ক্লাব পর্যায়ে তিনি সেরা সময় অতিবাহিত করেছেন, যেখানে তিনি প্রায় ৬১ শতাংশ ম্যাচ জয়লাভ করেছেন। তার অধীনে কোরিন্থিয়ান্স বেশ কিছু শিরোপা জিতেছে। যার মধ্যে ২০১২ কোপা লিবের্তাদোরেস এবং ২০১২ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ অন্যতম।

এরপর ২০১৬ সালের ২০ জুন দুঙ্গা বরখাস্ত হওয়ার পর ব্রাজিলের দায়িত্ব নেন তিতে। তার অধীনে ২০১৯ কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতে ব্রাজিল। এরপর ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালও খেলেছে তিতের অধীনে। যার কারণে এবার বিশ্বকাপে তিতের প্রতিও নজর থাকবে।

এরপরই রয়েছে আর্জেন্টিনার মাস্টারমাইন্ড লিওনেল স্কালোনি। তার প্রোফাইল অতটা ভারী না হলেও বিশ্বসেরা কোচদের তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। এখনো প্রতিপক্ষ দল ভাবে যে, মেসিকে আটকে রাখলেই আটকে যাবে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষের এমন ধারণাও পাল্টে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন এই মাস্টারমাইন্ড। তার অধীনেই টানা ৩৬ ম্যাচ হারেনি আর্জেন্টিনা। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্কালোনি।

এর মধ্যে তিনি আর্জেন্টিনার ২০০৬ বিশ্বকাপ দলের অংশ ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তির পর তিনি কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোচ হিসেবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে ২০২১ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়। টানা ২৮ বছরের খরা কাটিয়ে তারই অধীনে আর্জেন্টিনা জিতেছে আন্তর্জাতিক শিরোপা।

বাড়তি নজর থাকবে ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমের দিকেও। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখার মিশনে এবার কাতারে পা রেখেছেন এই কোচ। ২০১২ সালের ৮ জুলাই ফ্রান্সের দায়িত্ব নেন দিদিয়ের দেশম। ২০১৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, উয়েফা ইউরো ২০১৬-এর ফাইনাল এবং ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি নিয়ে যান তার দল ফ্রান্সকে।

গতবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। যার ফলে মারিও জাগালো ও বেকেনবাওয়ারের পর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড় ও ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড করেন দিদিয়ের দেশম।

এছাড়াও বেকেনবাওয়ারের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অধিনায়ক ও ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বও অর্জন করেন দেশম। কোচ হিসেবে প্রতিটি ম্যাচেই দলকে আলাদা আলাদা ফরম্যাটে খেলানো দেশমের অন্যতম কৌশল। হ্যান্সি ফ্লিক জার্মানির বর্তমান কোচ। তার দিকেও এবারের বিশ্বকাপে থাকবে আলাদা নজর।

১৯৯৬ সালে ভিক্টোরিয়া বামামেন্টালের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ফুটবল জগতে অভিষেক হয় হ্যান্সি ফ্লিকের। ভিক্টোরিয়ায় চার মৌসুম দায়িত্ব পালন করার পর ১৮৯৯ সালে হফেনহাইমে ম্যানেজার হিসেবে পুনরায় ফিরে আসেন ফ্লিক।

পরবর্তীতে তিনি রেড বুল জালৎসবুর্গ, জার্মানি ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরুে নিকো কোভাচের প্রস্থানের পর তিনি বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্লাব ইতিহাসে তার অধীনে দ্বিতীয় মহাদেশীয় ট্রেবল জেতে বায়ার্ন মিউনিখ। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দুই মৌসুমে তিনি সর্বমোট সাতটি শিরোপা জিতেছেন। ২০২১ সালে তিনি জার্মানির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এবারের আসরে ফেভারিটের তমকা নিয়েই কাতারে পাড়ি জমিয়েছে ইংল্যান্ড। গেল বছর তাদের স্বপ্ন ভাঙে সেমিফাইনালে। তারুণ্যনির্ভর শক্তিশালী দল নিয়েই এবার কাতার মিশনে ইংলিশরা। গতিময় ও অ্যাটাকিং ফুটবলই গ্যারেথ সাউথগেটের মূলমন্ত্র। ২০০৬ সালের জুন থেকে ২০০৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মিডলজব্রার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন সাউথগেট।

এছাড়া তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাউথগেট। ম্যানেজার হিসেবে তার প্রথম প্রতিযোগিতামূলক আসর ছিল ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ। এতে তিনি আলফ রামসি ও ববি রবসনের পর তৃতীয় কোচ হিসেবে ইংল্যান্ড দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিয়ে যান। যার জন্য তিনি বিবিসি স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার কোচ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। যার জন্য কাতারে গ্যারেথ সাউথগেটের দিকেও কড়া নজর থাকবে ইংল্যান্ড ভক্তদের। সেরা পাঁচ কোচের মধ্যে কে বেশি এগিয়ে— এমন প্রশ্নের উত্তরটা হয়তো এবারের কাতার বিশ্বকাপে আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে যাবে।

Link copied!