Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪,

স্ত্রীর অপহরণ মামলায় তিন বছর কারাগারে স্বামী

শরিফ রুবেল

নভেম্বর ২৩, ২০২২, ০৯:৪৪ এএম


স্ত্রীর অপহরণ মামলায় তিন বছর কারাগারে স্বামী

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গিয়াস উদ্দিন। প্রায় ১৫ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে দৌড়ঝাঁপ করছেন। চেহারায় চিন্তার ভাঁজ। দেখে মনে হচ্ছে, কোনো অজানা এক আতঙ্ক তাকে চেপে ধরেছে। কথা বলে জানা গেল, স্ত্রীর করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ছেলে জাহাঙ্গীর আলম প্রায় তিন বছর ধরে কারাগারে আছেন। নানা চেষ্টার পরও নিম্ন আদালত থেকে ছেলেকে মুক্ত করতে পারেননি। তাই পরিবারের একমাত্র  উপার্জনক্ষম ছেলেকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে জামিন চাইতে হাইকোর্টে এসেছেন গিয়াস উদ্দিন-সুফিয়া দম্কতি।

গিয়াস উদ্দিন জানান, ছেলের জামিন হয়েছে তিন দিন হলো কিন্তু কারাগার থেকে বের হতে পারছে না। কারণ হাইকোর্টের জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি এখনো ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যায়নি। তাই জামিন পেয়েও মুক্তি পাচ্ছে না জাহাঙ্গীর।

নিয়ম অনুযায়ী জামিন আদেশের নথি কারাগারে যায় সরকারি ডাকে। এখানে উকিল, মুহুরি ও মক্কেলের কোনো কাজ নেই। তবুও আপনারা হাইকোর্টে এসে সময় নষ্ট করছেন কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘উকিল-মুহুরি আসতে বলে তাই আসি। আসলেই শুধু  টাকা চায়। টাকা দেই, তবে কাজ হয় না। ছেলেটা আমার তিন বছর ধরে জেলে। কামাই-রোজগার নেই। তাই পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। অনেকদিন ভালো খাওয়া-দাওয়াও হয় না। পকেটে কিছু টাকা ছিল। তাই নিয়ে কোর্ট-কাচারি ঘুরছি। রাতে ঢাকায় থাকার মতো কোনো জায়গা নাই। রাত কাটে রেললাইনে। রেললাইনে ঘুমানোর কোনো জায়গাও নাই। সুযোগও পাচ্ছি না। গত চার রাত হলো তেজগাঁও রেলস্টেশনে সারারাত জেগে জেগে সময় কাটাচ্ছি।’

গিয়াস উদ্দিনের কাছে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্কর্ক থেকে ঢাকার মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে নিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় জাহাঙ্গীর। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০২০ সালে তাদের বিয়েও হয়। তখন বিয়ের কাবিননামায় মেয়ে বৃষ্টি আক্তারের বয়স দেখানো হয় ১৯ বছর। আর ছেলে জাহাঙ্গীরের ২৪ বছর। দেনমোহর ধরা হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে আদালতে মামলা করেন বৃষ্টির বাবা মো. জামাল মিয়া। কাবিনে প্রাপ্ত বয়স্ক থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপহরণের মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয় স্বামী জাহাঙ্গীরসহ পরিবারের একাধিক সদস্যকে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জামিন পেলেও জামিন পাননি জাহাঙ্গীর।

সেই সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই দম্কতির। গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি ঢাকার সংসদ ভবনের সামনে ডাব বিক্রি করতাম। আজ থেকে তিন বছর আগে আমার ছেলেকে অপহরণ মামলায় জেলে পাঠানো হয়। বিয়ের কয়েক মাস পরই মেয়ের বাবা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে মামলা করেন। টাকা দিলে মামলা তুলে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমি গরিব মানুষ, কোনো মতে সংসার চালাই। এতো টাকা আমি কোথায় পাব। টাকা দিতেও পারি নাই, তাই ছেলেকেও জেল থেকে বের করতে পারি নাই। তিন বছর হলো ছেলে আমার জেলে পঁচে মরতেছে। আইনের ফাঁক-ফোকর বুঝি না। উকিল আমাদের বলেছে মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছেলের ৪০ থেকে ৪৫ বছরের জেল হবে। এতে আরও বড় চিন্তায় পড়ে গেলাম।’

উল্লেখ্য, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকায় তার বিবরণ ও আইনজীবীর নাম পরিচয় গোপন রাখা হলো।

Link copied!