Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪,

জঙ্গি ছিনতাইয়ে নতুন ঝুঁকি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০১:৩৮ এএম


জঙ্গি ছিনতাইয়ে নতুন ঝুঁকি

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কাবস্থানের মধ্যেই নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা। যাদের এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  তবে এ ঘটনার পর সমাবেশ ঘিরে ঢাকার ছাড়াও সারা দেশেই পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট; যা এখনো বহাল রয়েছে। বিএনপির সমাবেশসহ জঙ্গি ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশজুড়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। সার্বিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম বা গণসমাবেশ কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল বুধবার রাজশাহীতে বলেছেন, আগুন সন্ত্রাস রুখে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়ে জঙ্গিবাদের বিষয়ে তথ্যগত সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

এদিকে পুলিশি তৎপরতার মধ্যে ঢাকার সব আবাসিক হোটেলের তালিকা ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করেছে পুলিশ। হোটেলে আগতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে।  পাশাপাশি মেসগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনগুলোতেও সতর্কাবস্থায় থাকবে পুলিশ।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে যে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর যদি বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে রিজার্ভ ফোর্স আনা হবে। তারা বিভিন্ন থানা পুলিশের সাথে দায়িত্ব পালন করবে। ওই দিন রাজধানীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। সমাবেশস্থল ছাড়াও বিভিন্ন কেপিআই পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। বাড়ানো হবে টহল ডিউটিও। সাদা পোশাকে তৎপর থাকবেন গোয়েন্দারা। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রথমে পুলিশ ধৈর্য ধারণ করবে। তবে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে কঠোর অ্যাকশনে যাওয়ার পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। একইভাবে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় নতুন ঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় রেখে দেশজুড়ে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেশের সব বাস-লঞ্চ, ট্রেন স্টেশন কিংবা সীমান্তেও অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছুটি না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্দোলন করতে গিয়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনায় ইতোমধ্যে যেসব নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়েছেন তাদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে ওই দিন সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।

সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত এড়াতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএমপি। পুলিশের অধীনস্থ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর করা হচ্ছে। ছুটি নিতে পুলিশ সদস্যদেরও নিরুৎসাহিত করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, তারা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই   যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে সারা দেশের পুলিশ ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্তে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, তাদের ছবি প্রতিটি থানায় পাঠানো হয়েছে। দুর্ধর্ষ আসামিদের ডান্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সমন্বিতভাবে কাজ করার চেষ্টা চলছে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, নতুন কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গত ৬ নভেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে ১০ ডিসেম্বর প্রসঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে নাশকতা হতে পারে— এমন আশঙ্কার কথা উঠে আসে। ওই দিন ঘিরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগাম নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাজধানীতে বেশ কিছু বড় বড় সমাবেশ হয়েছিল। সেসব সমাবেশে সহিংসতা মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে পুলিশ সদস্যরা। ওই সময় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহিনীর অনেক সদস্য জীবনোৎসর্গও করেছেন।

তিনি বলেন, কেউ যদি সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে, জানমালের ক্ষতি করে, বোমাবাজি করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এগুলো দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে ডিএমপির একাধিক ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের ক্ষতি ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

তবে জঙ্গি হামলা বা নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, আশঙ্কা না থাকলেও আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। যারা এ ধরনের কাজ (নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও) করতে পারে তাদের ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে।

দেশের কোনো বৈধ রাজনৈতিক দল সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করলে পুলিশই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যদি সমাবেশের নামে কেউ নাশকতা বা সহিংসতার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে কঠোর হাতে আইন প্রয়োগ করা হবে। জানমাল ও জনসাধারণের ক্ষতিসাধন করলে কেউ ছাড় পাবে না।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে ইতোমধ্যে রাজধানীতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের টহল ও তল্লাশি চালোনো হচ্ছে। এ মাসের শেষের দিকে পুলিশের টহল আরো জোরদার করা হবে।

Link copied!