Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

পরিবহন ধর্মঘট পুলিশি বাধা উপেক্ষা

রাজশাহীর সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা

সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী

সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী

ডিসেম্বর ২, ২০২২, ১২:৫০ এএম


রাজশাহীর সমাবেশস্থলে বিএনপি নেতাকর্মীরা

আগামীকাল শনিবার বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। হাজী মুহম্মদ মহসিন উচ্চ বিদ্যালয় (ঐতিহাসিক মাদ্রাসা) মাঠে এ বিভাগীয় সমাবেশটি হবে, বিএনপি ঘোষিত ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত শেষ সমাবেশ। এ উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। আট শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (অরএমপি)। সমাবেশের দুদিন আগেই রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে অসতে শুরু করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় তারা সমাবেশ সফল করতে আগাম চলে এসেছেন রাজশাহীতে, অবস্থান নিয়েছেন মাদ্রাসা মাঠের পাশে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, পদ্মা নদীর তীরসহ আশপাশের খোলা জায়গায়।

সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা তাঁবু গেঁড়ে আশ্রয় নিয়েছেন মাঠে। রান্না হচ্ছে প্রতিটি তাঁবুর সামনে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের অমেজ, তবে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় পথে পথে ভোগান্তির জন্য সরকারকে দায়ী করে নানান বক্তব্য দেন সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা।

জয়পুরহাট থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শামস মতিন বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তিনদিন অগেই চলে আসতে হয়েছে। আমাদের জয়পুর হাট থেকে আসা অন্তত এক হাজার কর্মীকে পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে। নাটোর থেকে আসা বিএনপি দলীয় এক কর্মী বলেন, আমরা চরম বাধা উপেক্ষা করে রাজশাহীতে পৌঁছেছি। পথে পথে পুলিশি বাধা মোকাবিলা করতে হয়েছে বারবার। বাস থেকে নামিয়ে দিলে অটোতে উঠি সেখানেও আটকে দেয় পুলিশ। অবশেষে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসা মাঠে এসেছি।

বগুড়ার গাবতলী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম পিন্টু বলেন, আমরা হাজার হাজার বিএনপির কর্মী বুধবার রাতেই বিভিন্ন যানবহনে রাজশাহী এসেছি, কারণ স্বৈরাচার সরকার যেখানেই বিএনপির সমাবেশ হয় সেখানেই পরিবহন ধর্মঘট দেয়। কিন্তু মুক্তিকামী জনতাকে কোনো বাধা দিয়েই আটকাতে পারবে না।

বগুড়া গাবতলী পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নাই, তিনদিন অগেই ধর্মঘট দিয়েছে কিন্তু আমাদের আটকাতে পারেনি। মানুষ নদীরপাড়ে রাস্তায় স্টেশনে শুয়ে দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়েছে। এগুলো আমাদের কষ্ট না এগুলো আমাদের বিজয়ের আনন্দ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়ক কমিটির দলনেতা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু আমার সংবাদকে বলেন, সমাবেশের নির্ধারিত দিনের তিনদিন আগেই শতবাধা পেরিয়ে জনগণ রাজশাহীতে চলে এসেছে। শনিবার রাজশাহী হবে গণসমাবেশের নগরী। সমাবেশের মধ্যে দিয়ে স্বৈরচার হাসিনাকে পতনের বার্তা দেয়া হবে।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, মনে হচ্ছে কিছু পুলিশ বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে, সমাবেশকে ঘিরে তাদের অপতৎপরতা তাই প্রমাণ করে। রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ অভিমুখি আসা গাড়িগুলো ফিরিয়ে দিয়েছে। মানুষ পায়ে হেঁটে সমাবেশ আসছে। জনস্রোত রাজশাহীতে পৌঁছে গেছে ৩ তারিখ দেখবে জনসমুদ্র কাকে বলে। পুলিশ প্রশাসনের বদনাম হোক আমরা চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। ধর্মঘটে আমাদের আটকাতে পারবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা পদ্মার পাড়ে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে ছিল তাদেরও পুলিশ সরিয়ে দিয়েছে। রান্নার হাঁড়ি পাতিল পুলিশ কেড়ে নিয়ে গেছে। বিএনপির এ নেতার দাবি বুধবার রাতের মধ্যেই এক লাখ মানুষ রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছে। এদিকে যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বিভাগের আট জেলায় এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। ধর্মঘটের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং বাইরের কোনো বাসও প্রবেশ করেনি। গতকাল সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকাগামী বাসও।

রাজশাহী মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাসটার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বাস না পেয়ে অনেকে বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছেন; অনেকে আবার ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রেন ধরতে রেল স্টেশনে ভিড় করেছেন। বাস বন্ধ থাকায় আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা বাধ্য হয়ে সিনএজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার ও মাইক্রোবাসসহ ছোট ছোট গাড়ি ভাড়া করছেন। কিন্তু ধর্মঘটের সুযোগে এসব যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

পরিবহন মালিক সমিতির ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— ১. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে। ২. হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি-হুইলার (নছিমন, করিমন, ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদি) চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৩. জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করতে হবে। ৪. কোভিডকালে গাড়ি চলাচল না করায় সে সময়ের ট্যাক্স মওকুফ করতে হবে। ৫. সব ধরনের সরকারি পাওনাদির (ট্যাক্স-টোকেন, ফিটনেস) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ৬. চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স-সংক্রান্ত নানাবিধ জটিলতা নিরসন করতে হবে। ৭. পরিবহনের যাবতীয় কাগজ হালনাগাদ বা সঠিক থাকার পরও নানাবিধ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ৮. উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ৯. মহাসড়কে হাট-বাজার আয়োজন বা পরিচালনা করা যাবে না এবং চলমান হাটবাজার অতি দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। ১০. যাত্রী ওঠানামার জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করতে হবে।

Link copied!