Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

রাজশাহীর মহাসমাবেশে মির্জা ফখরুল

‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হবে না’

সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী

সাদিকুল ইসলাম স্বপন, রাজশাহী

ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ১২:৩৪ এএম


‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হবে না’

বাংলাদেশে একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকার জাতির কাঁধে চেপে বসেছে, এ দেশের মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই আগামী দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। 

গতকাল রাজশাহীর বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, বিএরপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এ সরকার। সামপ্রতিক অন্দোলনে আমাদের ৯ ভাইকে শহীদ করে দিয়েছে এই সরকার, এর পরও আমাদের নেতা কর্মীদের থামাতে পারেনি। রাজশাহীর এ বিশাল জনসমুদ্র তার প্রমাণ। পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাসে খেয়ে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে কিসের জন্য আপনারা এত কষ্ট করেছেন? করেছেন দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য।

এই স্বৈরাচার সরকার পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, কোন সংবিধান? যে সংবিধান নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নিজেদের মতো করে রচনা করেছেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ গানপাওডার  দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, এখন তারা আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে চায় না।

সরকারের লুটপাটের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকার দেশের কোষাগার খালি করে দিয়েছে মেগা উন্নয়নের নামে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। গত ১৪ বছর ধরে দেশের মানুষ কস্টে আছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত দেখে সরকার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ ফসলের দাম পায় না, চাকরি পায় না, চাকরি পায় শুধু তাদের দলীয় লোকেরা।

আমাদের এ আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নই, আমাদের  অন্দোলন দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য, ভোটারদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এবার হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, একটি জাতীয় সরকার গঠনসহ নানা দাবি তুলে ধরেন মাদ্রাসা মাঠের এই জনাকীর্ণ সমাবেশে। তিনি  আবেগ জড়িত কণ্ঠে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের পরিবারের বুকফাটা কান্নার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বক্তব্যের শেষদিকে স্মরণ করেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কথা, তিনি বলেন, এই মাঠে বেগম জিয়া কতবার সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন, আজ তিনি মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি। আমরা অবিলম্বে আমাদের মাতাকে মুক্ত করব ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজশাহীর তিন ঘণ্টার সমাবেশ তিন দিনে গড়িয়েছে। জনগণের জোয়ার উঠলে কেউ ঠেকাতে পারে না। দেশে যারা ক্ষমতায় আছে তারা দিনের ভোট রাতে করে এসছে। শুধু আমরা নই গোটা পৃথিবী বলছে কিন্তু এই সরকারের কোনো লজ্জা নেই। বাংলাদেশে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি হয়েছে, অন্যদিকে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে আর এই কোটিপতিরা সবাই সরকারের কাছের মানুষ। অতীতে কখনো সেকেন্ড হোম, বেগমপাড়া, সুইস ব্যাংকের কথা শোনা যেত না, এখন আপনারা শুনছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা বেকারমুক্ত, গরিবমুক্ত গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়তে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তিনি বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যেতে বলেন, আপনারা কি আপনাদের মানুষ মারা আন্দোলনের কথা ভুলে গেছেন? ক্ষমতাসীনরা আমাদের উসকানি দিচ্ছে সহিংসতার জন্য আমরা যেন তাদের ফাঁদে পা দেই, কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি।

সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের একটিই দাবি অবৈধ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা এই সমাবেশ করছি কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তারা আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ লুট করেছে তার প্রতিবাদে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য। জনগণ আজ জেগেছে আর বেশি দিন জুলুম নির্যাতন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে ভাতের ও ভোটের জন্য গণতন্ত্রের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। ’৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধ করেছি এখনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করতে চাইলে উর্দি খুলে করুন। পুলিশের পোষাকে কোন অন্যায় কাজ করবেন না। সকাল সাড়ে ১০টায় চাল ডাল জ্বালানি তেল গ্যাস-বিদ্যুৎ সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি-দুঃশাসন গুম খুন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় এ সমাবেশ ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে শুরু হয়। ঘড়ির কাঁটায় যখন সাড়ে১২টা বাজে তখন সমাবেশ মঞ্চে অসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

লোকে লোকারণ্য মাঠ ছাপিয়ে জনস্রোত নগরীর সিএন্ডবি মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সদর হাসপাতালের মোড় ছাড়িয়ে গ্রেটার রোড শহীদ রাজিব চত্বর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক  অ্যাড. মো. এরশাদ আলী (ঈশ)। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

Link copied!