Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সক্রিয় হচ্ছে জামায়াত হেফাজত

আবদুর রহিম

ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ১২:১৩ এএম


সক্রিয় হচ্ছে জামায়াত হেফাজত
  • ইত্তেফাক মোড়, মালিবাগ ও কমলাপুরে থাকবে জামায়াত বায়তুল মোকাররমে হেফাজত
  • হেফাজত, কোটা সংস্কার ও শিশুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কৌশল অনুসরণ
  • ২০ দলীয় জোটসহ ডান, বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলো আলাদা ব্যানারে মাঠে থাকবে
  • তিন দিনে ১৫০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি অনেকে আত্মগোপনে
  • পল্টনের সিদ্ধান্তে বিএনপি অনড়, প্রশাসন বলছে রাস্তায় অনুমতি দেয়া হবে না

রাজধানীর আতঙ্ক গণগ্রেপ্তার। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। চলছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়িতেও অভিযান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাসাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে গত তিনদিনে প্রায় ১৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে।

এদিকে পল্টনে সমাবেশ নিয়ে এখনো অনড় বিএনপি। অন্য কোনো ভেন্যু দিলেও যাবে না। প্রশাসনও বলছে রাস্তায় কোনো সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। রাজনীতির উত্তাপ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থান দেখে সারা দেশের মানুষের মধ্যেও শঙ্কা কাজ করছে। অনেকে ওইদিন কোনো কাজ রাখছেন না। রাস্তায় বের হওয়ার মতো কোনো প্রস্তুতিও রাখছেন না। এমন দৃশ্যপটে এবার বিএনপিও পিছু হটছে না। বহুমুখী কৌশলে ১০ ডিসেম্বরকে টার্নিং পয়েন্ট ধরে সরকারকে চাপে ফেলতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। ওইদিন ২০ দলীয় জোটসহ  ডান, বাম ও মধ্যপন্থি দলকেও মাঠে নামানো হবে আলাদা ব্যানারে। সমপ্রতি বেশ কয়েকটি সিরিজ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমাবেশের প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দল কোথায় থাকবে সেটির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কয়েকটি সমমনা দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে  ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশে যুগপৎ আন্দোলনে একযোগে রাজপথে সরব থাকবে তারা। সমাবেশ মঞ্চে না থাকলেও রাজধানীর প্রতিটি স্পটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন। সরকারের পক্ষ থেকে বাধা এলে প্রতিহত করার সব ধরনের কৌশলও ঠিক করেছেন।

অতীতে হেফাজত, কোটা সংস্কার ও  শিশুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কৌশল অনুসরণ করছে বিএনপি। মাঠের আন্দোলনের অভিজ্ঞ দল জামায়াতে ইসলামীকে ওইদিন মাঠে চাচ্ছে বিএনপি। ইত্তেফাক মোড়, মালিবাগ ও কমলাপুরে জামায়াতের নেতাদের অবস্থানের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর হেফাজতে ইসলামকে বায়তুল মোকাররমকেন্দ্রিক মাঠে রাখতেও যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচনে পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়াসলি কনসার্ন থাকায় জামায়াত কিংবা হেফাজতকে বিএনপির ব্যানারে আনা হবে না।

এদিকে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে  নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, নির্যাতনে দেশে একটা ভয়-ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রায়েরবাজারের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো হয়েছে। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যরা এই বাড়িতে থাকেন। কিন্তু অভিযানকালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নিপুণ রায় কেউ বাসায় ছিলেন না।

দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের শ্যালক উত্তরা পূর্ব থানা যুবদল নেতা সিফাত ইসলাম দিপু শিকদার ও গাড়িচালক সোহেলকে উত্তরা থেকে গাড়িসহ গত সোমবার রাত আনুমানিক ১১টায় তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

এ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে— ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলাম রানা, দারুস সালাম থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন দিপু, আদাবর থানা শ্রমিক দল যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুর রহিম, বিএনপি নেতা সোহেল মিয়া, আলমগীর, থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কামাল সরকার, উত্তরা থানা শ্রমিক দল সদস্য আরিফ হোসেন, রামপুরা থানা শ্রমিক দল যুগ্ম-আহ্বায়ক মোস্তাক হোসেন বাবুল, ভাটারা থানা শ্রমিক দল যুগ্ম-আহ্বায়ক আহাদ হোসেন, বনানী থানা বিএনপি নেতা মো. জহির, আশরাফ, জয়নাল আবদীন, উত্তরখান থানা বিএনপি নেতা মো. হাসান খান, আফতাব উদ্দিন জুয়েল, সালাম মৃধা, রাজিব, ২০নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা হাজী মো. লুৎফর রহমান, মো. রুবেল মিয়া, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি এস এম আনছার আলী, দারুস সালাম থানা কৃষকদল নেতা মো. আল আমিন, মৎস্যজীবী দল নেতা মো. আবদুর রহিম, রামপুরা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, থানা বিএনপি নেতা দেওয়ান নজরুল ইসলাম।

এছাড়া গুলশান থানা বিএনপি নেতা হানিফ মিয়া, ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদল আহ্বায়ক আসাদ, উত্তরা থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আফতাব উদ্দিন জুবেল, বিএনপি নেতা হাসান খান, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপি নেতা মাহফুজ, ডা. ইব্রাহিম, সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রদল নেতা মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ, মোহাম্মদপুর থানা ৩২নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. নাসিম 
এবং মো. ইমরানসহ কমপক্ষে ৭৬ জন নেতাকর্মীকে।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান মুসাব্বিরের বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বাসার সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

১০ ডিসেম্বর রাজধানীর আরামবাগে গণসমাবেশের জন্য বিএনপি মৌখিকভাবে অনুমতি চেয়েছে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান। 

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বলেন, বিএনপি আমাদের কাছে আরামবাগে সমাবেশ করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি চেয়েছে। তবে আরামবাগে বড় কোনো মাঠ নেই। আরামবাগের রাস্তাতে অনুমতি চেয়েছে। তবে আমরা কোনো রাস্তায় সমাবেশের অনুমতি দেব না।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রাজধানীতে মাঠ ছাড়া রাস্তাঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি বিএনপি পাবে না। সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া অন্য কোনো স্থানের নাম প্রস্তাব বিএনপি এখনো করেনি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চায়নি জানিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেছেন, আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনিরাপদ। আমরা সেখানে কোনো সমাবেশ করব না। সেটা আমাদের স্ট্যান্ড। আমরা তো রাজপথের লোক। সড়ক ছাড়া কোথায় করব? আমরা রাজপথটাকে বেছে নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, আমাদেরকে তারা রাজপথে প্রোগ্রাম করতে দিতে বাধ্য হবে। যদি তা না করেন, তাহলে দায়-দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়। দায় তাদের নিতে হবে। নয়াপল্টনের এরিয়াতেই আমাদের থাকতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান আমার সংবাদকে বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সরকার ঢাকাসহ দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী সরকার ইতোমধ্যে ৯টি বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশগুলো দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আর তাই তারা ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে চায়। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হবে না।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে ডিবি পুলিশ কর্তৃক এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীসহ জনগণ যেন ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশে যোগ দিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু অবৈধ সরকারকে বলতে চাই- বিএনপি গ্রেপ্তারের ভয়ে আতঙ্কিত নয়। যত বাধাই আসুক, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে জনতার নজিরবিহীন ঢল নামবে।

আর এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগর উত্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও স্বতস্ফূর্তভাবে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে সাফল্যমণ্ডিত করবে। আমি অবিলম্বে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার শেষ সময়ে এসে চরম মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। একদিকে চলছে গায়েবি এবং মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের হিড়িক, অন্যদিকে অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারকেও হার মানিয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে একটি গোষ্ঠী হামলা-মামলা চালাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ মহাসমাবেশের রূপ লাভ করবে। ইতোমধ্যে অনেক লোক ঢাকা আসা শুরু করেছে। পল্টন এলাকায় এখনই লোকে লোকারণ্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই সমাবেশের দিকে সারা দেশের যেমন মানুষ তাকিয়ে আছে, তেমনি সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই সমাবেশকে যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে। এটা আজকে এই জাতির অস্তিত্বের প্রশ্ন। জাতিকে যদি রক্ষা করতে চাই, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই, গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই- তাহলে ১০ ডিসেম্বর সফল শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ করতে হবে।’

Link copied!