Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪,

খাদ্যনিরাপত্তায় ‘পারিবারিক পুষ্টিবাগান’

বেলাল হোসেন

ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ০১:০৯ এএম


খাদ্যনিরাপত্তায় ‘পারিবারিক পুষ্টিবাগান’

দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে গুরত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পুষ্টিমানে গড়ে তুলতে প্রান্তিক পর্যায়ে পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় স্থাপন করা হচ্ছে পুষ্টিবাগান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। দেশের ইউনিয়ন এবং পৌরসভার নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের নারীরা বসতভিটে, পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন বাগান করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এসব বাগানে উৎপাদিত হচ্ছে নিরাপদ শাক-সবজি, মসলা ও মৌসুমি ফল। যা সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আয় বৃদ্ধি করছে পরিবারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় তিন বছর মেয়াদে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন’ শীর্ষক  প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। এই নির্দেশনা অনুসারে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এই প্রকল্প। প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহূত জমিতে প্রায় পাঁচ লাখ পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কোনোরকম কীটনাশক ব্যবহার না করে, শুধু ভার্মি কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি অবলম্বন করে পুষ্টিবাগান প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, কলমিশাক, লালশাক, বেগুন ও কাঁচামরিচ আবাদ করছেন। এতে দেখা যায় বসতবাড়ির আঙ্গিনায় বেশ কিছু বেড স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করছেন। প্রান্তিক এলাকার অনেক পবিবারে এক সময় ঠিকমত তরকারি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তবে নতুন এই পদ্ধতিতে সবজি বাগান করার কারণে তারা পরিবারের দৈনিক সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কয়েক হাজার টাকা বাড়তি আয়ও করছেন।  অনেকেই বলছেন, নতুন এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষের কারণে এখন নিজেরা খেতেও পারছি, আবার বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারছি। প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহূত জমিতে ১০০টি করে অর্থাৎ মোট চার লাখ ৮৮ হাজার ৪০০টি সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের সমন্বয়ে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। বসতবাড়ির স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে কচুজাতীয় সবজির প্রদর্শনীও স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে কচুজাতীয় সবজি আবাদের জন্য সাত হাজার ৩৮০টি প্রদর্শনী ও বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে আদা, হদুল চাষের জন্য আরও সাত হাজার ৩৮০টি প্রদর্শনী করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত বসতবাড়ির অনাবাদি জমিতে এক লাখ এক হাজার ৩৮৯টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রদর্শনী স্থাপিত হয়েছে এবং এক লাখ ৫২ হাজার ৮৪ শতক (১৫২১ একর) অনাবাদি পতিত জমি চাষের আওতায় এসেছে। পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রদর্শনী স্থাপনে কৃষকদের তিন  মৌসুমের বীজ, সার, ছয়টি ফলের চারা ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রদর্শনী থেকে উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল থেকে এক লাখ এক হাজার ৩৮৯টি কৃষক পরিবারের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাখ ৫০ হাজার ৭০৭টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পারিবারিক এক লাখ ১৩৩টি পারিবারিক সবজি পুষ্টিবাগান প্রদর্শনীর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বর্তমানে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছর জুন, ২০২৩ পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৫২ হাজার ৯৬টি পারিবারিক পুষ্টিবাগান বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে তিন লাখ ৭৮ হাজার ১৪৪ শতাংশ (৩৭৮২ একর) অনাবাদি পতিত জমি আবাদের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, প্রতিটি পারিবারিক পুষ্টিবাগান থেকে এক বছরে গড়ে ৩৭৮ কেজি সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এর ফলে আগামী জুন ২০২৩ পর্যন্ত ৮৮ হাজার ৩২৫ টন সবজি উৎপাদন হবে। এছাড়াও প্রকল্প শুরু হতে ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত মোট পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রর্দশনী স্থাপিত হবে চার লাখ ৮৮ হাজার ৪০০টি যার ফলে প্রায় তিন হাজার ২৬৫ হেক্টর অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আসবে এবং প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার ৯০৪ টন সবজি উৎপাদিত হবে।

প্রসঙ্গত, দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিব যেন ডিসিদের সহায়তা নিয়ে এসব অনাবাদি জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলেন সেই নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমি ফেলে রাখা যাবে না। জমিতে নানা ধরনের চাষাবাদ করতে হবে।

Link copied!