Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাবলিক টয়লেট

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০১:০৪ এএম


অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাবলিক টয়লেট

ঢাকার দুই সিটিতে পাবলিক টয়লেট রয়েছে মাত্র ১৩৭টি। রাজধানীর বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্রাব দীর্ঘসময় আটকে রাখার কারণে কিডনিতে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমনকি অপরিচ্ছন্ন টয়লেট থেকে রোগ-বালাই ছড়াতে পারে।

তাই এগুলো অবশ্যই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে। এছাড়া পাম্প, মার্কেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকা কোনো একটি ভবনের নিচতলায় পাবলিক টয়লেট করা যেতে পারে। এতে টয়লেটের সংখ্যাও বাড়বে, পাশাপাশি নগরবাসীর ভোগান্তিও অনেকটা লাঘব হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকার মালিটোলা পাবলিক টয়লেটটিতে নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে আলাদা বাথরুম। পুরুষদের জন্য ব্যবহূত টয়লেটে নষ্ট রয়েছে পানির কল, ফ্ল্যাশ। এমনকি নেই পানির পাত্র। একই অবস্থা নারীদের জন্য ব্যবহূত টয়লেটটিতেও। সবমিলিয়ে সেখানে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ফলে নারী কিংবা পুরুষ সবাইকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

এছাড়াও কোনো কোনো পাবলিক টয়লেটে পাত্র থাকলেও নেই পানি। কোথাও ড্রাম ভর্তি করে রাখা রয়েছে পানি। বাথরুম থেকে পাত্র এনে বাইরে থাকা ড্রাম থেকে নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন নারীরা। আবার কোথাও একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী পাবলিক টয়লেট। ভাঙা দরজা, দরজা থাকলে ছিটকানি নেই। অপরিচ্ছন্ন টয়লেট প্যান, এ ধরনের বাথরুম কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য নয়। রাজধানীর পুরান ঢাকা, মিরপুর, নর্দ্দা-কালাচাঁদপুর, মহাখালী, শাহবাগসহ অন্যান্য পাবলিক টয়লেটগুলোর চিত্র একই। এদিকে নগরীতে থাকা ভাসমান মোবাইল টয়লেটগুলোর অবস্থাও বেহাল। এগুলোর কোনোটির চাকা নষ্ট, আবার কোনোটি তালা মারা রয়েছে।

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ১৩৭টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এর ভেতর উত্তর সিটিতে ৬৭টি আর দক্ষিণ সিটিতে ৭০টি। এসব টয়লেটের বেশিরভাগই নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। বাধ্য হয়েই এগুলো ব্যবহার করতে হচ্ছে পথচারীদের। এদিকে পাবলিক টয়লেটের মানোন্নয়নে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কাজ করছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে তারা জানায়, দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৯০ শতাংশ পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। পাবলিক টয়লেট থেকে রাজস্ব আয়েও পিছিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলো।

এছাড়াও দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ঘাট ও পাবলিক টয়লেটের ইজারা থেকে সম্ভাব্য আয় ধরেছিল ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু ইজারা বাবদ রাজস্ব আয় করে ৩৫ লাখ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি ২০২১-২২ অর্থবছরে টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার ও ভাগাড় থেকে সম্ভাব্য আয় ধরেছিল ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। নগরীর পথচারীরা জানান, পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে সার্ভিস চার্জ ঠিকই নিচ্ছে কিন্তু সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।  

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে একদিকে বিপুল জনসংখ্যা বসবাস করছে, অন্যদিকে প্রতিদিনই লাখ লাখ লোক ঢাকাতে আসা-যাওয়া করছেন। সবাই চাইলেই তাদের আত্মীয় বা পরিচিতের বাসায় গিয়ে তাদের জরুরি কাজটা সারতে পারছেন না। বিশেষ করে নারীরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন। প্রস্রাব দীর্ঘসময় আটকে রাখার কারণে কিডনিতে দুই রকমের সমস্যা হচ্ছে। এতে করে কারো কিডনি কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার কারো কিডনি ইনফেকশন হতে পারে। পাবলিক টয়লেট অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলে একজনের রোগ অন্যজনের হতে পারে। অর্থাৎ রোগ ছড়াতে পারে। তাই টয়লেটের সংখ্যাও বাড়ানোর পাশাপাশি বর্তমানে যেগুলো রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

নগরপরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ আমার সংবাদকে বলেন, রাজধানীতে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলো ইজারার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। সিটি কর্পোরেশন থেকে যখন এগুলো ইজারা দেয়া হয় তখন কিন্তু কিছু শর্ত দেয়া থাকে। ইজারাদাররা শর্ত মেনে সেগুলো পরিচালনা করছেন কিনা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের তা নিয়মিত তদারকি করা। যদি তারা কোনো পরিচ্ছন্নতাসহ কোনো শর্তের ব্যত্যয় ঘটে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই সিটি কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে রাজধানীর পাবলিক টয়লেটগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে আরও পাবলিক টয়লেট দরকার সেটা সবাই বুঝতে পারছে। আর জায়গার অভাবে সিটি কর্পোরেশন গণশৌচাগার করতে পারছে না বলে জানায়। কিন্তু আমি মনে করি, ঢাকায় যেসব পাম্প, মার্কেট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে অর্থাৎ সেসব ভবনের নিচতলায় তারা পাবলিক টয়লেট করতে পারে। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য বাজেট আছে। কিন্তু জায়গার অভাবে তা করা যাচ্ছে না। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

Link copied!