Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংকট বাড়ছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০১:১০ এএম


আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংকট বাড়ছে
ছবি-প্রতীকী
  • ঋণ বাড়লেও কমছে আমানত
  • জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশায় গ্রাহক
  • নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈষম্য ও দুর্নীতিবাজদের দুষছেন খাত সংশ্লিষ্টরা

আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক খাত। বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতির দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া এবং দীর্ঘ সময়ে আমানতকারীরা টাকা ফেরত না পাওয়ায় হতাশা বেড়েছে। নতুন করে আমানত সংগ্রহে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে টাকা তুলে নিচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে বিতরণকৃত ঋণ ফেরত না আসায় বাড়ছে দায়। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ অব্যাহত থাকায় তহবিল ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের চেয়ে ভালো করছে বলে দাবি তাদের।

তারা বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ঋণ দিয়েছে, ব্যবস্থাপনায় পরিচালকরা হস্তক্ষেপ করেছে কিংবা ঋণ বিতরণে কর্মকর্তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি, তাদের অবস্থাই খারাপ হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআইয়ের আমানত দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে এক হাজার ২০৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআইয়ের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৬ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে ঋণ বিতরণ বেড়েছে দুই হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঋণ জালিয়াতি এবং পরিচালকদের অর্থ লুটপাটের কারণে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না। যা এ খাতের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। এ কারণে নতুন করে আমানতকারীরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা রাখতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আমানতে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের সর্বোচ্চ কোনো সীমা রাখা হয়নি। আছে সর্বনিম্ন সীমা। ফলে সুদহার কম হওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা কম রাখছেন গ্রাহকরা।

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত দিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করা হয় ১১ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এনবিএফআই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) নেতারা বলছেন, অসম প্রতিযোগিতায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ছে। আমানতে সুদহার নির্ধারণে বৈষম্য হচ্ছে বলে তারা দাবি করছেন।

এছাড়া স্বাভাবিক নিয়মেই ঋণ বিতরণ বেড়েছে। বাড়তি ঋণের সব নতুন নয়। আগের বিতরণ করা ঋণ আদায় না হলে সুদ-আসলসহ যোগ হয়। এখন আদায় কম হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে সমপ্রতি ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে প্রচারিত নেতিবাচক খবরের কারণে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে অর্থ তুলে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৭০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। যা মোট স্থিতির ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুন প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ছিল খেলাপি। খেলাপি ঋণের হার ছিল ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চপ্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ঋণস্থিতি ছিল ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। যা ওই সময়ের ঋণস্থিতির ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, দেশে প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে আইপিডিসির মধ্য দিয়ে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স দিয়ে থাকে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৪ এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও রেগুলেটরি বডি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সর্বশেষ নগদ ফাইন্যান্সকে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

Link copied!