Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

যানজট-জলজটের কিছুটা অবসান

বিশেষ প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৮, ২০২২, ০১:১৭ এএম


যানজট-জলজটের কিছুটা অবসান

যানজট ও জলজটের যন্ত্রণা মিরপুরসহ পুরো নগরীতে। মেট্রেরেলের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় কষ্ট কিছুটা হলেও অবসান হচ্ছে। মেট্রেরেলের কাজ শুরুর আগে ২০১৫-১৬ সালে শুরু হয় সেবা সংস্থার লাইন সরানোর কাজ, ভোগান্তির শুরু তখন থেকেই। 

সাত বছর আগে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় থেকেই ব্যবসায় ক্ষতি গুনছেন মিরপুর এলাকার রাস্তার দুই ধারের ব্যবসায়ীরা। তাদের সেই দুর্দশা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল কোভিড মহামারি। কেবল ব্যবসার ক্ষতি নয়, প্রতিদিন যানজট ঠেলে ঠেলে মিরপুরের বাসিন্দাদের যে পরিমাণ সময়ের ক্ষতি হয়েছে, তার কোনো অংক কেউ মেপে রাখেনি।

করোনা ভাইরাসের ত্রাস কমে গেছে আগেই, মিরপুর অংশে মেট্রোরেলের কাজ শেষে স্বস্তিও ফিরেছে গত কয়েক মাস হলো। উদ্বোধনের পর চলাচল শুরু হলেই মিরপুরবাসীর এতদিনের কষ্ট লাঘব হবে, স্থানীয়রা এখন সেই অপেক্ষায় আছেন। এছাড়া এই সড়কে একটু বৃষ্টি হলেই যে কষ্ট হতো এখানকার নাগরিকদের, তা কিছুটা হলেও কমে আসার ক্ষণ গুনছেন অনেকে।

প্রথমদিকে আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ি অংশের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে ছুটবে মেট্রোরেলের দ্রুতগতির বৈদ্যুতিক ট্রেন, আজ  বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল লাইনের আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কবে, সেই অপেক্ষা যেন তাদের ফুরাচ্ছিল না। অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে, যা নিয়ে এখন উচ্ছ্বাস তাদের।

আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ এ যেতে রাস্তার দুপাশে সারি সারি ফার্নিচারের দোকান; ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের নির্মাণযজ্ঞ এসব দোকান মালিকদের জন্য এসেছিল দুঃস্বপ্ন হয়ে। মেট্রোরেলের কাজ ধরার আগে মাসে ৩০-৩২ লাখ টাকার বিক্রি থাকত। মাঝে প্রকল্পের কাজ চলার সময় বছর তিনেক বিক্রি নেমে গেছিল মাসে ছয়-সাত লাখে। এলাকায় মানুষ তো হাঁটার জায়গাই পেত না, গাড়ি নিয়ে আসা ছিল দুঃসাধ্য। বাধ্য না হলে ক্রেতারা এদিকে আসত না। বিক্রির পর মাল গাড়িতে তোলাও ছিল যন্ত্রণা। তালতলায় ২০ বছরের পুরোনো দোকান হাকিম ফার্নিচারের ম্যানেজার রহমত উল্লাহ এভাবেই সেই কষ্টের দিনগুলোর বিবরণ দিচ্ছিলেন গণমাধ্যমকে।

মিরপুর-১২ নম্বরে বাসস্ট্যান্ডের কাছেই একটি স্টেশনারি দোকানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হাসানের সঙ্গে। তার কথায়, এই মেট্রোরেল নির্মাণকাজের সময় মিরপুরবাসীকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন সবার আগে তারাই মেট্রোরেলের সুফল ভোগ করতে যাচ্ছেন।

মিরপুরে ফুড মাস্টার রাজিব জানান, তার শিক্ষা সামগ্রীর দোকানটির বয়স আট বছর। এর মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণকাজের কারণে গত পাঁচ বছরই তার বেশ কষ্টে গেছে। স্কুলে আসা-যাওয়া থেকে শুরু করে, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নেয়া, সবকিছুতেই বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মিরপুরবাসীকে।

কিন্তু মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে ভালো আছি। মেট্রোরেল চালু হলে এই এলাকা আগের চেয়ে দ্বিগুণ মাত্রায় সরগরম হয়ে উঠবে। কারণ এখানে অনেক নাম করা স্কুল-কলেজ আছে। পাশেই ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। রোকেয়া সরণির দুই পাশেও বড় জায়গা নিয়ে আবাসিক এলাকা। মেট্রোরেলে যাত্রীর অভাব হবে না।

জানা যায়, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেল পথ নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

তবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে রোকেয়া সরণিতে মেট্রোরেলের পিয়ার বসানোর খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় পরের বছরের মাঝামাঝিতে। নির্মাণকাজ চলার সময় রাস্তার কোথাও সংকুচিত আবার কোথাও একেবারে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। বর্ষাকালে হাঁটু সমান কাদা পানিতে পরিস্থিতি হয়ে উঠে আরও ভয়াবহ।

রাস্তার দুই পাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মেট্রোরেল পথের দুই পাশে থাকা ফার্নিচার, ম্যাট্রেস, ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানগুলো দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ক্রেতার খরায় পড়ে। শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ থেকে ১২ এলাকায় রাস্তার দুই পাশের ফ্যাশন হাউজ, খাবারের দোকান কিংবা হার্ডওয়্যার ও হার্ডবোর্ডের দোকানগুলোর পরিস্থিতিও ছিল নাজুক। অনেক দোকান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত নতুন এ গণপরিবহন আজ থেকে ঢাকা নগরীতে ছুটতে শুরু করলে সুদিন ফেরার প্রত্যাশা করছেন এতদিন ক্ষতির হিসাব কষে আসা মিরপুরের ব্যবসায়ীরা।

Link copied!