Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

আবদুর রহিম

ডিসেম্বর ৩১, ২০২২, ১২:৩৩ এএম


গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

আগামী ১১ জানুয়ারি সারা দেশে বিভাগ ও মহানগরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগরীর কর্মসূচি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পালন করা হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই ঘোষণা দেন।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা ৩২টি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এই গণমিছিল করা হয়। সবাই বিএনপির সাথে এক সাথে  ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজধানীতে সরকারবিরোধী দলগুলো অনুষ্ঠিত পৃথক গণমিছিলের কর্মসূচি থেকে এই গণঅবস্থানের ঘোষণা দেয়া হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রিয় ঢাকাবাসী— যারা সব বাধা উপেক্ষা করে গণমিছিলে উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তারকৃত সব রাজবন্দি ও নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন তিনি বলেন, আমরা জনগণের পক্ষে ১০ দফা ঘোষণা করেছি। তারই প্রথম কর্মসূচি হলো গণমিছিল। আজকে এসব দফার প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জোট সমর্থন জানিয়েছে।

আমাদের ১০ দফার মূল হলো— অবিলম্বে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে বিএনপির গণসমাবেশ থেকে জনগণ অংশ নিয়ে আওয়াজ তুলেছে— অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। তাদের আর জনগণ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা স্বৈরাচার ও বিশ্বে হাইব্রিড সরকার নামে পরিচিত। এ জন্য তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশালী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তারা দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে। তাদের সাথে জনগণ নেই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে সরকারি দলের লোকেরা বিদেশে টাকা পাচার করে ব্যাংকগুলো শূন্য করে ফেলেছে। অর্থনীতি ধ্বংসের শেষ সীমানায় চলে গেছে। দেশে বিচার বিভাগ দলীয়করণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের দ্বারা অর্থনীতি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, কোনো স্বৈরাচার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এরশাদ পারেনি, আইয়ুব খান পারেনি। এই আওয়ামী লীগ সরকারও পারবে না। আমি বলব, এসে দেখে যান বিএনপির সাথে জনগণ আছে কি নেই? আজকে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েও জনগণকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। আমরা আমাদের দফা আদায়ে আরও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করব। এই স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় করতে হলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খন্দকার মোশাররফের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই ১৩টি স্পটে জমায়েত হয়ে বিএনপির গণমিছিল শুরু হয়।

এসময় অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের এই গণমিছিলে যেসব জোট দল আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এই ঢাকা শহরে কর্মসূচি পালন করছে, আমাদের বিশ্বাস এসব দল যুগপৎভাবে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি দেবে। গণমিছিলে অংশ নিতে সকাল ১০টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী নয়াপল্টনে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। নেতাকর্মীদের মাথায় সাদা, লাল ও সবুজ ক্যাপ এবং জাতীয় পতাকা পড়ে গণমিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে।

গণমিছিলে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, বেনজীর আহমেদ টিটো, মো. আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, পেশাজীবী পরিষদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, ড. শামসুল আলম সেলিম, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, ডা. জাহেদুল কবির জাহিদসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী।

ঢাকায় জামায়াতের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, আক্রমণের অভিযোগ পুলিশের : রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় গতকাল শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। মালিবাগ, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় এসব সংঘর্ষের পর পুলিশ কয়েকজনকে আটকও করেছে। এসব সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। রাজধানীর মালিবাগে জামায়াতের একটি মিছিলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। জুমার নামাজের পর মিছিলকারীদের পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ বলছে, এটি জামায়াত শিবিরের মিছিল ছিল। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর একটি মিছিল আবুল হোটেলের সামনের রাস্তা হয়ে মৌচাকের দিকে যায়। পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তবে এরপরও মিছিল চলতে থাকে। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আবারও বাধা দেয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা ধারণা করছি, এটি জামায়াত শিবিরের মিছিল ছিল। তাদের হাতে জামায়াতের ব্যানার ছিল। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে —১২ দলীয় জোট : বিজয়ের মাসে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। গতকাল বেলা ৩টায় রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনের সড়কে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের নেতারা এই ঘোষণা দেন। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় নগর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি সমর্থন করে এসব দাবি আদায়ে ১২ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও গণমিছিল করার ঘোষণা দেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে এই জোটের মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে জোটের নেতারা বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু করে পুরানা পল্টন মোড়ে ঘুরে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ করেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২২ ডিসেম্বর বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। ১২ দলীয় এই জোটে রয়েছেন মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

এদিকে গণমিছিলের আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে আজ নতুন পর্বের সূচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন এ দেশে নতুন পরিস্থিতির জন্ম দেবে বলে মনে করেন এই নেতা। সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ১১ জানুয়ারির নতুন আরেকটি কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি। ওই দিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান মোস্তফা জামাল হায়দার। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গণসমাবেশ পূর্ব সমাবেশে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করে তারা ঘরে ফিরবেন। এনডিপির চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদ আবু তাহের বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৭০ দিন হরতাল করেছিল। ক্ষমতায় এসে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। অবিলম্বে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল উত্থাপন করতে হবে। রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সরকার পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না দিলে সরকার পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না। মুসলিম লীগের মহাসচিব জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, মেহনতী জনতার সংগ্রাম কখনোই ব্যর্থ হয় না।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মো. ইকরাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। আলেমদের মুক্তি দিতে হবে। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল করিম বলেন, খালেদা জিয়াকে চার বছর কারান্তরীণ রেখে তিলে তিলে মারার চেষ্টা চলছে। আলেম-ওলামাদের অন্যায়ভাবে দুই বছর কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা আলেম-ওলামাসহ সব রাজবন্দির মুক্তি চাই। গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাগপার সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, এনডিপির চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ আবু তাহের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

এলডিপির গণমিছিল থেকেও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা অলির : বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে গণমিছিল করেছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি। গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথ (এলডিপি কার্যালয়) থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে পুনরায় মগবাজার গিয়ে মিছিল শেষ হয়। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আগামী ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারা দেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গণমিছিলে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এলডিপির কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে পালনের অংশ হিসেবে গণমিছিল করছি। বর্তমান সরকার অর্থনৈতিকভাবে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। মেট্রোরেলসহ মেগা প্রজেক্টের নামে বাংলাদেশ থেকে লাখো কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ বিধ্বস্ত। যার কারণে আগামী দুই-তিন বছর পর প্রশাসন চালানোর জন্য যোগ্য ও মেধাবী জনবল পাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস। যার কারণে এক কোটির অধিক মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গমন করছে।’

এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, রপ্তানি আজ সংকুচিত হচ্ছে। আমদানির টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকে টাকার অভাব। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার অর্থনৈতিকভাবে বিপদে পড়েছে। এর জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবে। গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. নূরুল আমিন, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট মাহবুব মুর্শেদ, প্রিন্সিপাল অ্যাডভোকেট সাকলাইন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল মাহবুব রহমান, কারিমা খাতুন, যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন মিয়াজীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গণমিছিল থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা : ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কারও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। গতকাল দুপুরে গণমিছিল শেষে কাকরাইল মোড়ে এক সমাপনী সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিলটি পুরানা পল্টন, বিজয় নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শহীদুল্লাহ কায়সার, রাশেদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাবলু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের গণমিছিল শেষ করেছি। ১১ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আ.লীগ ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে, গুম করে, মামলা, হামলা করে তারা ক্ষমতায় আছে। তিনি বলেন, ভোট চুরির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন, বলেছিলেন তার ওপর ভরসা রাখতে। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। ২০১৮ সালে মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে কলঙ্কজনক একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই মুনাফিক সরকারের কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। পদত্যাগ করার পরে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বক্তব্য রাখেন।

Link copied!