Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

শিক্ষাব্যয়ে বিপাকে অভিভাবক

মো. নাঈমুল হক

জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ১২:২৮ পিএম


শিক্ষাব্যয়ে বিপাকে অভিভাবক
  • শিক্ষাউপকরণের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৫৫ শতাংশ
  • দাম কমাতে সরকারের প্রতি ছাত্রনেতাদের আহ্বান
  • শিক্ষাব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার —ইউনেস্কোর প্রতিবেদন

 বাজার নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষাউপকরণে প্রণোদনা প্রয়োজন

—বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম

বছরের প্রথমেই নতুন শিক্ষাউপকরণ ক্রয়ের চাপে অভিভাবকরা। নিম্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর নিত্যখরচের হিসাব মিলছেই না। দেশের মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের চড়া দাম ও দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির বড় প্রভাব পড়েছে শিক্ষাউপকরণ ও শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপর। এর সামগ্রিক দায় বহন করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। সে জন্যই নতুন বই, স্কুল ড্রেস, জুতার দাম, কাগজের দাম, প্রতিষ্ঠানের বেতন ইত্যাদি ব্যয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। গত শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষে সব উপকরণের দাম ২৫ থেকে ৫৫ ভাগ বেড়েছে। 

অভিভাবকরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির মধ্যে শিক্ষাউপকরণের চড়া দামে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন শিক্ষাউপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া প্রয়োজন। ছাত্রনেতারা শিক্ষাউপকরণের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ইউনেস্কোর তথ্যও উঠে এসেছে— বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার। 

গেন্ডারিয়ার এলাকার বাসিন্দা সালমা খাতুন বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাউপকরণেরও দাম কেন বাড়বে? ওদের বাবার বেতন তো বাড়েনি। বাড়তি খরচে সংসার চালানো নিয়ে চিন্তায় আছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাসেল আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে সন্তানদের শিক্ষাসামগ্রী কিনতে গিয়ে অবাক হই। সব কিছুর দাম ২৫-৫৫ শতাংশ করে বেড়ে গেছে। 

ছোট্ট চাকরিতে জীবন কাটানো যেখানে কঠিন সেখানে বাড়তি শিক্ষাব্যয় কীভাবে নির্বাহ করব? সন্তানদের পড়াশোনা তো বন্ধ করতে পারব না। কম ব্যবহারেই জীবন চালাতে হবে। সন্তানের জন্য শিক্ষাসামগ্রী কিনছিলেন বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী লতিফুর রহমান। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ২৮০ টাকার রিম কাগজ কিনলাম ৪৮০ টাকায়। কাগজেই ২০০ টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে। 

এরপর ব্যাগ, নতুন শ্রেণির গাইড ইত্যাদির খরচ তো আছেই। যে যুগ আইছে, পড়ালেখা না করিয়ে তো উপায় নেই। সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া এত খরচ আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। পুরান ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পার্শ্ববর্তী দোকানগুলো সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বইয়ের দাম ৫০-১০০ টাকা করে বেড়েছে। এক হাজার টাকার স্কুল ড্রেস এক হাজার ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

কাগজের দাম কয়েক দফা বাড়ার পর বর্তমানে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ৪২ গ্রাম ২৮০ টাকার রিম কাগজ বর্তমানে ৪৫০ টাকা। ৫০ গ্রামের দাম ৩৫০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা । ৫৫ গ্রামের দাম বেড়েছে ২৩০-২৫০ টাকা। হাতের লেখার ছোট খাতার দাম ২০ থেকে বেড়ে ২৫ টাকা হয়েছে। মাঝারিগুলো ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। ১২০ পৃষ্ঠা খাতার দাম বর্তমানে ৪০ টাকা, আগে ছিল ৩০ টাকা। ২০০ পৃষ্ঠার দাম ৭৫ টাকা। ৩০০ পৃষ্ঠার দাম ৮৫ টাকা। ৮০ জিএসএম এ-৪ সাইজের খাতা ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪২০ টাকা হয়েছে। 

৬৫-জিএসএমের দাম ২১০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। যদিও তিন মাস আগেও এর দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। পাঁচ টাকার কলমের দাম না বাড়লেও ১০-১২ টাকা দামি কলমের দাম দুই-তিন টাকা বেড়েছে। জ্যামিতি বক্সের দাম ২০-৩০ করে বেড়েছে। এক জোড়া বাটা জুতার দাম ছিল এক হাজার ৩৯৯ টাকা, সেটি এখন এক হাজার ৪৯৯ টাকা। দুুই হাজার ৯৯ টাকার জুতা এখন দুই হাজার ২৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  এ ছাড়াও পরীক্ষার খাতার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিভিন্ন জিনিসে মতো শিক্ষা উপকরণেও দাম বেড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে। এর মধ্যে উপকরণ ক্রয়ে ভর্তুকি না দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংককে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এ ছাড়া সরকার বাজার তদারকি করে জরিমানার আওতায় আনতে পারে। যতটুকু দাম বেড়েছে এর বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা করা প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্যে না দিয়ে উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দিতে পারে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল শিক্ষাসামগ্রীর দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

এ ব্যাপারে সাবেক ডাকসুর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, শিক্ষাসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি কাম্য নয়। এর ফলে একজন শিক্ষার্থীও ঝরে যাক, আমরা তা চাই না। কারণ শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। বিনামূল্য বই বিতরণসহ সরকার দেশের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার ফলে অনেকাংশে দেশের নিরক্ষারতা দূর হয়েছে। শতভাগ অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান হলো শিক্ষা খাতে আরো ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। 

২৫ ডিসেম্বর শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ানোর  প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। 

এতে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এ ধরনের হঠকারী ও গণবিরোধী সিদ্ধান্তেরর প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউনেস্কোর গ্লোবাল অ্যাডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে শিক্ষার্থীদের পরিবার। 

এনজিও বা বেসরকারি স্কুলের ফি ও ব্যয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিনগুণ। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এ ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯গুণ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠনের ওপর নির্ভরশীল। আবার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪ শতাংশই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠ নিয়ে থাকে।

Link copied!