জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০১:১২ পিএম
আবারও দেশ মেরামত করবেন শেখ হাসিনা —ওবায়দুল কাদের
নতুন বাংলাদেশ গঠনে সবাই জেগে উঠছে— মির্জা ফখরুল
- ফরিদপুর, ময়মনসিংহে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে কর্মসূচি পণ্ড, বহু আহত
- ঢাকায় পাঁচ স্পটে আওয়ামী লীগ, ১৭ স্পটে বিএনপির গণঅবস্থানে উত্তেজনা
- বিএনপিসহ ৪০ দলের আগামী সোমবার সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা
ক্ষমতায় যেতে পালটাপালটি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। হ্যাটট্রিক সময়ে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে আগামীতে দেশ সংস্কার হবে। অন্য কাউকে আর দুর্নীতি করতে দেয়া হবে না। বিএনপি বলছে, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ নিয়ে তাদের ১০ দফার আন্দোলন চলছে। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে ২৭ দফার মাধ্যমে দেশকে সংস্কার করা হবে। দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগ স্বাধীন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা হবে।
এ নিয়ে রাজপথে চলছে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ। ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনাও। গতকাল ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে আ.লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে বিএনপির। বহু আহত ও আটকও হয়েছে। ঢাকায় পাঁচ স্পটে আওয়ামী লীগ, ১৭ স্পটে বিএনপি ও দলটির সমমনা ৯ দল জোটের অবস্থানে উত্তেজনা ছিল পুরো ঢাকা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।
মিরপুরের শাহ আলী মাজারের পাশে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ, ফার্মগেটে উত্তর যুবলীগ। আর রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শাহবাগ, নাবিস্কো এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা লাঠি হাতে দিয়েছেন মহড়া। অন্যদিকে পল্টন, প্রেস ক্লাব, বিজয়নগর, আরামবাগ, মতিঝিল, মগবাজার এলাকায় ছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
আবারও দেশ মেরামত করবেন শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে, তারা নাকি দেশ মেরামত করবে। মেরামত তো করেন শেখ হাসিনা। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না, গণতন্ত্রের বস্ত্রহরণ করবে। তাদের হাতে আমরা দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। খেলা হবে, খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, খেলা হবে গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসিত করে দায়মুক্তি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের অবস্থান কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৫৪টি দল আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের অবস্থানে কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ৫৪ দল একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেমেছে। তারা ভুয়া।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, উপপ্রচার-বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম ও কার্যনিবাহী সদস্য সানজিদা খানম।
বিএনপি নেতাদের কান ধরে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন নানক : ব্যর্থতার দায়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কান ধরে উঠবস করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা সরকার পতনের ডাক দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের বারবার বিভ্রান্ত করছে উল্লেখ করে নানক বলেন, সরকার পতন এত সহজ না, কারণ এই সরকার জনগণের সরকার।
মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা যদি সরকার পতন করতে না পারেন, তাহলে পল্টন কার্যালয়ের সামনে নেতাদের কান ধরে উঠবস করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিএনপি দেশের ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এ দেশে ভোট চুরি করেছে, এখন তারাই আমাদের ভোট ব্যবস্থা সংস্কার করতে বলে। এটা লজ্জার বিষয়। লজ্জায় তাদের মাথানত করে থাকা উচিত। আসলে তাদের লজ্জাই নেই।
লজ্জা থাকলে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি দিত না— হানিফ : বিএনপির কারণেই দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল দাবি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, লজ্জা থাকলে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি দিত না।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কর্মসূচি দেয়, ১/১১ এর জন্য তাদের লজ্জা হওয়া উচিত। তাদের কারণেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে ছিল, আছে, থাকবে। হানিফ বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকার-আলবদররা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করবে আওয়ামী লীগ। রাজপথ উত্তপ্ত করতে চাইলে জবাব দেয়া হবে। প্রতিহত করা হবে।’
১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও মিছিল : আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা-উপজেলা, মহানগর ও পৌর শহরে ১০ দফাসহ বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
নতুন বাংলাদেশ গঠনে সবাই জেগে উঠছে : মির্জা ফখরুল
সরকার পতন আন্দোলনে জনগণকে জেগে উঠার ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আপনারা জেগে উঠেছেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এখন আমাদের আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। আমরা আজকে সেই প্রস্তুতি নেই, আসুন আমরা জেগে উঠি। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, এই স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আসুন আমরা আজকে একটা নতুন বাংলাদেশ, একটা সত্যিকার অর্থেই জনগণের বাংলাদেশ, সত্যিকার অর্থেই একটা কল্যাণমূলক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য, আমাদের সন্তানদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য, তাদের স্বপ্ন দেখানোর জন্য আমরা সবাই জেগে উঠি। জেগে উঠে আমরা বাধ্য করি এই স্বৈরশাসকের দুঃশাসনের তখতে তাউসকে সরিয়ে সেখানে একটা জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করি। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সমস্ত বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের জাগিয়ে তুলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদ হচ্ছে এটাই যে, আজকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। এই যে অন্যায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ৬০ জন দেশবরেণ্য নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। আমি তাদের এ জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
আমি ধন্যবাদ জানাতে আমাদের মিডিয়া-গণমাধ্যম কর্মী ভাইদের, তারা জনগণের আন্দোলনের খবর প্রচার করে জনগণকে জাগিয়ে তুলছেন। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, দেশের সব মানুষকে যারা আজকে আমাদেরকে এই গণ-আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচয় দেয়। আমরা জানি যে, তারা অত্যন্ত পুরোনো পরিচিত দল। কিন্তু এখন তারা সম্পূর্ণভাবে তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেজন্য তাদের এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে।
বিশ্ব আর এই সরকারকে চায় না —দাবি মোশাররফ হোসেনের : সরকারকে বিদায় করা বিএনপির চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আন্দোলনকে বিশ্বাস করে। আমাদের কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা করবেন না। যদি করেন তার ফলাফল ভালো হবে না।
আমি স্পস্ট করে বলতে চাই, বিশ্বের কোনো দেশ এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। দেশের জনগণও আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। দাবি আদায়ে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। কারণ এই সরকার প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থাসহ সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। তাই ১০ দফায় সরকারকে হটিয়ে ২৭ দফার মাধ্যমে সংস্কার করা হবে। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, আমরা যুদ্ধে যাব না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পতন করা হবে। গণঅভ্যুত্থান করে সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা হবে।
সরকার আতঙ্কে আছে আমরা কখন বসে যাই —আব্বাস : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকার আতঙ্কে আছে কখন আমরা রাস্তায় বসে যাই। সব সময় আমাদের শুধু এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছেন। আব্বাস বলেন, আমরা ধোঁকা দিয়ে নয়, ধাক্কা দিয়ে নয় একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করে ক্ষমতায় আসব।
কিন্তু সরকার উসকানি দিলে ফলাফল ভালো হবে না। আজকে জেলখানায় জায়গা নাই, পুরো বাংলাদেশকে জেলখানায় পরিণত করেছে সরকার। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে পতন করব এই অবৈধ সরকারকে। আমরা কোনো রকম বিশৃঙ্খলা কাজে বিশ্বাস করি না। বিএনপি কোনো দাঙ্গা কর্মকাণ্ড করে না।
ভোটারবিহীন এমপিদের টেনে নামানো হবে —আমান
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, ঢাকা শহরে লাখ লাখ মানুষ অবস্থান করেছেন ১০ দফা দাবি আদায়ের জন্য। আজকে ঘোষণা দিচ্ছি, হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে।
এই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে। ভোটারবিহীন এমপিদের টেনে নামানো হবে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আজকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ফয়সালা হবে রাজপথে। আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
যেভাবে মঞ্চ ভাঙল তেমনি সরকারও পড়বে —ডা. জাহিদ
যেভাবে ওবায়দুল কাদের মঞ্চ ভেঙে পড়েছেন তেমনি এই সরকারও ভেঙে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা এ দেশের সবার দাবি। বিএনপির সমাবেশ, গণমিছিলে লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে তা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপির দাবির সাথে মানুষ এক হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে এই সরকারকে সরাতে ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে। এই সরকারের সব অন্যায় ও দুর্নীতির বিচার করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের সৈনিকরা প্রমাণ করেছে তারা ঐক্যবদ্ধ। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ আবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হবে।
এখন ভোট চোর বললেই গুম —বললেন আফরোজা আব্বাস
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ চাই, ভোট চোরকে চোর বলতে চাই। কিন্তু এখন চোর বললে আমাদের নেতাকর্মীরা গুম হয়ে যাচ্ছে। আমরা হারানো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই। কথা বলার অধিকার চাই। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষকে রেখে পালিয়ে যাননি। তিনি দেশের মানুষের জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করছেন।
শেখ হাসিনার ঠিকানা হবে কেরানীগঞ্জে —শিরীনের হুঁশিয়ারি
বিএনপির স্বনির্ভর-বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা বলেন, এই সরকারের সময় শেষ। এই সরকার কারাগারকে উন্নত করছে। তারা জানে কারাগারই আসল ঠিকানা। আর শেখ হাসিনার ঠিকানা হবে কেরানীগঞ্জ কারাগারে। এ জন্য আগ থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সঞ্চলনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মঞ্জু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
সোমবার সারা দেশে ১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ
আগামী সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকাসহ সারা দেশের সব মহানগর, জেলা-উপজেলা সদরে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঘোষণা করেছে ১২ দলীয় জোট। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকি সংলগ্ন রাস্তায় গণঅবস্থান থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ১২ দলীয় জোট। অবস্থান কর্মসূচিতে জোটের বক্তারা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন বেগবান করার জন্য রাজপথে সবাইকে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
তারা বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের পদত্যাগ সময়ের ব্যাপার মাত্র। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের বিদায় হবে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম।
ওবায়দুল কাদেরের মতো ভেঙে পড়বে সরকারের মঞ্চ —বলল এলডিপি
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেভাবে মঞ্চ ভেঙে পড়েছেন ঠিক সেভাবে সরকারও বিদায় হবে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চ ভেঙে পড়ে গেছেন। মঞ্চ যদি সঠিকভাবে তৈরি না হয় এবং যতটুকু ভার নিতে পারবে তার চেয়ে বেশি যদি ভার নেয়া হয় তাহলে মঞ্চ ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
এই সরকারও জাতীয় সম্পদ যেভাবে লুট করেছে, সেই লুটের বোঝায় ওবায়দুল কাদেরের মতো সরকারও ভেঙে পড়বে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনা বলেন, তারেক জিয়া যদি অতি বাড়াবাড়ি করে তাহলে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে। তাহলে বিচারব্যবস্থা কি আপনার হাতে? এগুলোর তো বিভিন্ন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আপনে (শেখ হাসিনা) অস্বীকার করতে পারবেন না।
আপনে যে কথা বলেন, সেগুলো বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আপনার বিচার হওয়া উচিত। আপনি জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়ার কে? রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোতে বেগম খালেদা জিয়া কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি। তারপরও আজকে কোনো অজুহাত ছাড়া একটি চার্জ গঠন করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদার আমরা মুক্তি কামনা করছি।’
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। ১৬ জানুয়ারি সকাল ১১টায় কারওয়ান বাজার বিইআরসি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করবে তারা। গতকাল সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
গণতন্ত্র মঞ্চের গণঅবস্থানে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম এবং সঞ্চালনা করেন ইমরান ইমন।
ফরিদপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় কর্মসূচি পণ্ড, আহত অর্ধশতাধিক
ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় পণ্ড হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। হামলায় মঞ্চ ভাঙচুরের পাশাপাশি বিএনপির অর্ধশতাধিক কর্মীকে আহত করা হয়েছে বলেও জানান তারা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের অম্বিকা ময়দানে শুরু হয় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি। কর্মসূচিতে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ স্থানীয় নেতারা মিছিল সহকারে সমবেত হন।
কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, সাবেক এমপি শাহ মো. আবু জাফর, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাসের আলী ইছা, সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনসহ স্থানীয় নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেয়ার সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণঅবস্থান কর্মসূচির স্থান সংলগ্ন শহীদ সূফি ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর। যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ সময় উভয়পক্ষের মাঝে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পালটা ধাওয়া শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। উভয়পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ শুরুর কিছু সময় পর বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উভয়পক্ষের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার কারণে বিএনপির নির্ধারিত বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
এ ঘটনায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। হামলা ও মঞ্চ ভাঙচুরের কারণে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা অবস্থানস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হন। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে হামলার জন্য যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়। পালটাপালটি হামলার ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে বিএনপি-আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ
ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী দুটি বাসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি মঞ্চের ২০০ গজ দূরে নগরীর গোলপুকুর পাড় এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি স্থলে আসার পথে গোলপুকুরপাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে হামলা করে। পরে আমাদের নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় তারা পিছু হটেছে। তিনি আরও বলেন, সকাল ১১টার দিকে নগরীর জুবলীঘাট সড়কে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে কিশোরগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী দুটি বাসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হকিস্টিক ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।
এ সময় দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়। তারা গাড়ির হেলপারসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করেন। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার কথা শুনেছি, কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা নেই। তবে, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।