Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর আশা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০১:৩৪ এএম


লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর আশা

বোরো উৎপাদন
লক্ষ্যমাত্রা দুই কোটি ১০ লাখ টন
বেড়েছে আবাদি জমির লক্ষ্যমাত্রাও
দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা

গত মৌসুমে বোরো উৎপাদন লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে। একই সাথে কৃষকের হাতে উন্নত জাতের ধান সরবরাহ করা হয়েছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোক না হলে চলতি মৌসুমেও উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন। বোরো আবাদের লক্ষ্যে দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রের তথ্য মতে, সরকার খাদ্যশস্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে এবং আমদানি-নির্ভরতা কমাতে কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সে লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে জমির আওতাও বাড়িয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান উৎপাদনের জন্য দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের বীজতলার জন্য শূন্য দশমিক ৫৭৮ লাখ হেক্টর, উফশী জাতের জন্য এক লাখ ৮৩ হাজার এবং স্থানীয় জাতের ধানের বীজতলা তৈরির জন্য শূন্য দশমিক শূন্য ১১ লাখ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই লাখ হেক্টর জমিতে তিন জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে মোট ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের জন্য ধান আবাদ করা হবে ১৩ লাখ হেক্টরের বেশি, উফশী জাতের ধান ৩৬ লাখ হেক্টরের বেশি এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হবে শূন্য দশমিক ১৭৬ লাখ হেক্টর জমিতে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো আবাদি জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ লাখ ৭২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪৯ লাখ ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই কোটি ৯ লাখ টন। উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো আবাদে জমির পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ হাজার ৬০০ হেক্টর। আর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই কোটি ১০ লাখ টন। যা গত বছরের তুলনায় এক লাখ টন বেশি।

অন্যদিকে চলতি মৌসুমে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় বোরোর পৃথক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৬১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরে রয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার এবং নন-হাওর এলাকায় হচ্ছে দুই লাখ ৩১ হাজার হেক্টরের বেশি জমি। এবার হাওরে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হবে এক লাখ ৯২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। উফশী জাতের ধান রোপণ হচ্ছে চার লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাকি শূন্য দশমিক ০৩৮ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে স্থানীয় জাতের ধান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলে দ্রুতগতিতে বোরো আবাদ চলছে। বোরো আবাদের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, এবারের মৌসুমে লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল জাত, হাইব্রিড এবং আগাম আসে এমন জাতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের কৃষকদেরকে আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। বীজতলা তৈরিতে সহযোগিতা করা হয়েছে। কৃষকদের আগাম জাতের বীজ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহ দেয়া হয়েছে জাতে তারা অল্প পানি থাকতেই চারা রোপণ করে ফেলেন। তাতে বর্ষার আগে আগে ফসল ঘরে তোলা যাবে। এ ছাড়া দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান। বিশেষ করে ৬৭ ও ৯৭ এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। কোনোরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।

Link copied!