Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

শিল্প-কারখানায় ও বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

পরোক্ষ প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২০, ২০২৩, ০১:৪৪ এএম


পরোক্ষ প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের পর এবার বাড়ানো হলো শিল্প কারখানায় ও বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গত বুধবার দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে। তবে আবাসিক, সিএনজি ও চা-শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়েনি, এসব খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম আগের মতোই রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ায় জনজীবনে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে। এদিকে সরকার বলছে, এই দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের ভর্তুকি কমবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি কিনতে গিয়ে পেট্রোবাংলা আর্থিক সংকটে রয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। আইএমএফ ঋণ ছাড়ের আগেই ভর্তুকি কমানোর শর্ত দিয়েছিল। সরকার ভর্তুকি কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে কেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিল্প কলকারখানার উৎপাদনশীলতার সাথে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। এখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সর্বোপরি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব পরোক্ষভাবে ভোক্তাদের ওপর পড়বে। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। করোনা ভাইরাসের ধাক্কা সামলানোর পর। পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্ব বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারে কাছে অনুরোধ জানাব, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তটি যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়। হঠাৎ করে দাম বেশি না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় করা হলেও ব্যবসায়ী খাতে নেতিবাচক প্রভাবও কমবে।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিশ্বে গ্যাসের দাম বাড়ছে। তাই আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়বে এটি প্রত্যাশিত। তবে এভাবে শিল্প খাতে দাম বৃদ্ধি কখনো প্রত্যাশিত হতে পারে না। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে এখন উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রিমূল্যের বড়সড় তফাত দেখা দেবে। এমনিতে পোশাক শিল্পের বাজার এখন খারাপের দিকে। ক্রেতারা আগের মতো অর্ডার দিচ্ছে না। অর্ডার সংকটের মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসাবান্ধব একজন প্রধানমন্ত্রী, আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী উৎপাদনের খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয়ের নির্দেশনা দেবেন।

তিনি বলেন, এমনিতে করোনা পর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে একদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার চাপ অপরদিকে কারখানার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, সবমিলিয়ে শিল্প মালিকরা আরেক দফা বেকায়দায় পড়ে গেল।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্যাভটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে) খাতে গ্যাস প্রতি ঘনমিটারে দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ দশমিক ৭৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগে প্রতি ঘনমিটারের দাম ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার দাম আগের মতোই ৯৯০ টাকাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দুই চুলার দাম ১০৮০ টাকাই আছে। সিএনজিতেও প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং চা-শিল্পের গ্যাসের দামও আগের মতো প্রতি ঘনমিটার ১১ টাকা ৯৩ পয়সাই আছে। একইসঙ্গে সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও আগের মতোই আছে। জরুরি এই খাতটিতে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম আগের মতো ১৬ টাকাই রাখা হয়েছে।

প্রতি ঘনমিটার সিএনজি মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা ও অপারেটর মার্জিন আট টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এদিকে গৃহস্থালি ছাড়া অন্যান্য গ্রাহকশ্রেণি যেমন- বিদ্যুৎ (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র), ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্ল্যান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ), সার, শিল্প, চা-শিল্প (চা-বাগান), বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) এবং সিএনজির ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে (মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে) ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ প্রযোজ্য হবে।  

Link copied!