জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০২:১০ এএম
- আর্থিক সংকটে ভেস্তে গেছে ১৫০ আসনের রোডম্যাপ
- যাত্রাতেই ইসির পরিকল্পনা পণ্ড, এখন কীভাবে মাঠ গোছাবে
প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার রহস্য ইসি ভালো জানে -আব্দুর রউফ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার
আউয়াল কমিশন নিয়ে আমি এখন চিন্তা করি না -কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার
মাঠ প্রশাসন ভালো থাকলে ব্যালটেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব -কবিতা খানম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার
`ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ভোটের আগে-পরে ইচ্ছেমতো বাক্স ভর্তি করা সম্ভব। তাই জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ইভিএম দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্ভব, অন্যথায় নয়। ইভিএমের ওপর প্রার্থী ও ভোটারদের আস্থা আছে।` গত বছর রোডম্যাপ উপস্থাপনে এমন ঘোষণা ছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের।
অবশেষে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সেই ইসি হোঁচট খেল। ভেস্তে গেল পরিকল্পনা। হচ্ছে না ইভিএমে ভোট। আর্থিক সংকটের কারণে প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে। আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই লাখ ইভিএম ক্রয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছরের ১৯ অক্টোবরে এই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এটি এখন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনায় চূড়ান্ত আঘাত আসে। ব্যালটে ভোট হলে ডাকাতি হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল ইসির পক্ষ থেকে তার এখন কী হবে তা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে যেহেতু ইসির কাছে মাঠের পর্যবেক্ষণ রয়েছে ব্যালটে ভোট হলে আগের রাতে ভোটডাকাতরা বাক্স ভর্তি করে ফেলেন।
স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোট করা সম্ভব নয়, এখন ব্যালটে নির্বাচন হলে দ্বাদশে গ্রহণযোগ্যতা কিভাবে আসবে তা নিয়ে ইসির দিকে দেশের সর্ব মহলের প্রশ্নের তীর। ইসির হাতে এই মুহূর্তে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০-৬০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা যাবে মাত্র। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একই বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসির দীর্ঘ পরিকল্পিত রোড ম্যাপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই অল্প সময়ে ইসি এখন কিভাবে মাঠ ঘুছাবে, সক্ষমতা কিভাবে অর্জন করবে তা নিয়ে বিশেষ মহল থেকে ঝুঁকি দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে ইসির আহ্বানে রাজনৈতিক সংলাপে জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএমের বিপক্ষে কথা বলেছে। আওয়ামী লীগসহ চারটি দল মাত্র ইভিএম চেয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করে। শুরু থেকেই রাজনৈতিক বিভাজন চলছে। সম্প্রতি ১১টি দেশের প্রতিনিধিরা ইসির কাছে জবাব চেয়েছিল ইসিতে ভোটের প্রস্তুতি কেমন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তবে ইসি চেষ্টা করছে সবার ঐকমত্য ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে। এ জন্য তিনি বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলকে ভোটে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানান।
সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, পরিকল্পনা কমিশন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে— ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রকল্পটি বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যা সম্ভব, তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত রয়েছে, তা বহাল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৫০-৬০ আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এখন যে ইভিএম রয়েছে সেগুলো দিয়ে যত আসনে ভোটগ্রহণ করা যায় তত আসনেই ইভিএমে ভোট হবে। তবে ঠিক কত আসনে ইভিএমে ভোট করা যাবে তা জানতে আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ আমার সংবাদকে বলেছেন, `কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন নিয়ে আমি এখন চিন্তা করি না। এগুলা নিয়ে এখন আর মাথা ঘামাই না। নতুন ইসি কি করবে, কিভাবে নির্বাচন করবে, এগুলোর খোঁজখবর এখন আর রাখি না। ১৫০ আসনের ইভিএম প্রকল্প বাদ পড়েছে— এরপর কিভাবে নির্বাচন হবে, সেটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এটি তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে নির্বাচনি কোনো ইস্যুতে এখন আমিও নিজেকে জড়াচ্ছি না।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ আমার সংবাদকে বলেছেন, ইভিএমই ভোট হবে এমন ঘোষণা দিয়ে এখন কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না— এর পেছনে কি রহস্য রয়েছে, এটি একমাত্র নির্বাচন কমিশনার ভালো বলতে পারবেন। এগুলো আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এখন তারা কিভাবে নির্বাচন করবেন, কেমন নির্বাচন করলে গ্রহণযোগ্য হবে- এটি তারাই ভালো বলতে পারবেন। প্রকল্প বাদ পড়াতে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকেই আপনারা প্রশ্ন করুন।
সাবেক আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম আমার সংবাদকে বলেছেন, আমাদের সময় ইভিএম ছিল না। আমরা ব্যালটের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট করেছি। এটি এমন তো নয় যে, ব্যালটে ভোট হলে গ্রহণযোগ্য হবে না। মাঠ প্রশাসন ভালো থাকলে ব্যালটের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। এ জন্য মাঠ প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে এখন থেকে প্রস্তুত করতে হবে। তবে এটি বলতে হয়— ইভিএমের স্বচ্ছতা বেশি সম্ভব সংঘাত এবং রক্তপাত এড়াতে অনেক ভূমিকা পালন করে।